বিএনপিতে ক্ষোভ, জোট শরিকদের বিরোধিতা
- আপলোড টাইম : ০৯:২৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৩২৪ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: দেড়শ’ আসন, দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব- যুক্তফ্রন্টের এসব দাবিকে জাতীয় ঐক্যের অন্তরায় মনে করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিকরা। এ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতেও। সরকারের বাইরে থাকা সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কিছু ছাড় দেওয়ার কথা বললেও দলটির শরিক ও তৃণমূল নেতারা বলছেন, যুক্তফ্রন্টের এ দাবি অবাস্তব। বিকল্পধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য- এ তিন দলের জোট যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম এক হয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে সম্প্রতি। তবে একে আমলে নিতে নারাজ বিএনপির শরিকরা। তারা বলছেন, যে চার দল যুক্তফ্রন্ট গড়ে ১৫০ আসন ও দুই বছরের জন্য সরকার গঠনের সুযোগ দাবি করছে, তাদের একটি আসনেও নিজ দল থেকে ভোট করে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা নেই। আজ ২০ দলের সভায় শরিকরা তাদের ক্ষোভের কথা জানাবেন বলে জানা গেছে। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগে ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায়’ সরকারের বাইরে থাকা সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আপত্তি থাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোটসহ সকল বিরোধী দলকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্য’ নামে পৃথক জোট গঠনের চেষ্টা করছে বিএনপি। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পুরনো শরিকরা। এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম এ নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে বাস্তববাদী হতে হবে। জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ঐক্যে কোনো লাভ হবে না। বিএনপির প্রধান শরিক জামায়াতের অবস্থানও অভিন্ন। দলটির নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সব দলের ঐক্য জরুরি। কিন্তু কোনো দলকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ গ্রহণযোগ্য নয়। কারোরই এ রকম বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়, যাতে ঐক্য বিনষ্ট হয়।
বিএনপির ১৯ বছরের পুরনো মিত্র জামায়াত নেতারা বলছেন, তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক। জোটের বাইরের দলগুলো তাদের নিয়ে কী বলছে এটা তারা আমলে নিচ্ছে না। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘২০ দলের শরিক কেউ যদি জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কথা বলতেন, তাহলে জবাব দেওয়া প্রয়োজন ছিল। যারা এ দাবি তুলেছেন, তারা কেউ ২০ দলের নন।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও শিগগির বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হবে। যুক্তফ্রন্টকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সবাই যদি কিছু ত্যাগ স্বীকার না করে, তবে জাতীয় ঐক্য হবে না। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তফ্রন্টের চার শরিকসহ অন্য দলগুলোকে কাছে টানা ও আওয়ামী লীগ থেকে দূরে রাখতেই নমনীয় অবস্থান নেওয়া হয়েছে। ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’র জন্য যুক্তফ্রন্ট নেতারা ১৫০ আসন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদ দাবি করলেও বিএনপি তাদের দাবি সরাসরি নাকচ করছে না। নির্বাচন পর্যন্ত সব দলকে ধরে রাখাই বিএনপির কৌশল। বিএনপির হাইকমান্ড কৌশলী হলেও দলের নেতাকর্মীরা যুক্তফ্রন্টের দাবি মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, যারা ১৫০ আসন দাবি করছেন তাদের ১৫০ জন কর্মী নেই। এসব বিষয় নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা জাতীয় ঐক্যের নেতাদের সমালোচনা করছেন। এই ঐক্যের বিরোধিতা করছেন।
বিএনপির ওই নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির নমনীয়তার সুযোগে অবাস্তব সব দাবি করেছে নামসর্বস্ব দলগুলো, যা বিএনপির জন্য বিব্রতকর। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জাতীয় ঐক্য নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে ইচ্ছুক নন। দলীয় ফোরামে আলোচনায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে দলের আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবার উচিত গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করা। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের নামে তারা যেসব দাবি-দাওয়া জানাচ্ছেন, তাতে নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির নেতাকর্মী যতটা ত্যাগ স্বীকার ও নির্যাতন সহ্য করেছেন, তা অন্য কোনো দলের করতে হয়নি। যুক্তফ্রন্ট নেতাদের দাবির বিরোধিতা করে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের অপরিহার্য মনে করছেন, তারা ক্ষমতা ভাগবাটোয়ারার কথা কেন বলছেন! তারা নীতিকথা বললেও বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রধান হাতিয়ার বানানোর চেষ্টা করছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের আপত্তি রয়েছে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়েও। তিনি বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। দলের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। পরে তাকে দল ছাড়তে হয়েছিল। বিকল্পধারা দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানও বিএনপির এমপি, মন্ত্রী ছিলেন। তিনিও পরে বিএনপি ছাড়েন।
বিএনপির জোট শরিকরা বলছেন, দুর্দিনে তারা ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ছিলেন। এখনও আছেন। অথচ তারা ক্ষমতায় যেতে শর্ত জুড়ে না দিলেও নামসর্বস্ব দলগুলো তাই করছে। এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য কারাগারে। তার মুক্তির দাবি করে একটি কথাও বলেননি ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। অথচ তারা বিএনপির সমর্থনে প্রধানমন্ত্রিত্ব চান। লোভ-লালসা উপেক্ষা করে ছয় বছর জোটে আছি। এখন ভোটের আগে কেউ কেউ নিজেদের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব দাবি করছেন। এটা অবান্তর। ২০ দলের শরিক জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেননি তিনি। দু’বার এমপি ছিলেন। কিন্তু যারা ১৫০ আসন দাবি করছেন, তাদের কারও কারও সংসদ নির্বাচনে জামানত রক্ষার ইতিহাস নেই।