প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামুন্দি গরুর হাটের ৩১টি প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকার কাজের কোনো হদিস নেই। ৩১টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ২টি প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শেষ করে প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের সভাপতি ও বামুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তবে সভাপতি ও বামুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল বিশ্বাসের দাবি, হাটের প্রকল্পের কাজে কোনো সময় নির্ধারণ থাকে না, তাই ধীরে ধীরে কাজ করা হচ্ছে। এদিকে, গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এর অর্থও পুরোটা এক মাস আগে ছাড় হয়ে গিয়েছে।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নীতিমালা অনুযায়ী হাট-বাজার ইজারার ১৫ শতাংশ অর্থ সংশ্লিষ্ট হাট-বাজার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মেহেরপুর জেলার বামুন্দি গরুর হাট, কসাইখানা উন্নয়নসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষন ও উন্নয়নের জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দে ৩১টি প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয়ে নতুন অর্থবছরের মাঝামাঝি এসেও সে কাজ আলোর মুখ দেখেনি।
বামুন্দি বাজার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনুমোদিত প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজই করা হয়নি। ২৮ লাখ টাকার বালির পরিবর্তে মাটি দিয়ে নাম মাত্র ভরাটে হয়েছে। এছাড়াও একটি টিন শেড উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে রাস্তা এইচবিকরণ, ড্রেন নির্মাণ, কসাইখানার টিন শেড ও মেঝে নির্মাণ, মুরগি ও কবুতর বিক্রির স্থানে টিন শেড লাগানোর কথা থাকলেও এগুলো কিছুই করা হয়নি। অর্থবছর শেষ হয়ে নতুন অর্থবছরের মাঝখানে শেষ হতে চললেও কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। এ হাটের উন্নয়নকাজ আদৌ হবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। হাটের কাজ না হওয়ায় তৎকালীন গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা খাতুন সমস্ত বিল আটকে দেন। সেই সাথে গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলকে প্রতিটি কাজ বুঝে পাওয়ার পর বিল প্রদান করা নির্দেশ দেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা খাতুন বদলির পর আসেন নতুন নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহানেয়াজ। আর এম সেলিম শাহানেয়াজ দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই হঠাৎ করে প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের সমস্ত অর্থ উত্তোলন করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বামন্দি ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতি শহিদুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।
বামুন্দি ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতি শহিদুল বিশ্বাস জানান, এই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ধীরে ধীরে কাজ করা হবে। তবে কবে হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, কাজ যেমন হয়নি, তেমনি প্রকল্পের টাকাও উত্তোলন করা হয়নি।
গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ বলেন, ‘এই প্রকল্পের কাজ আমার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তার আমলের। এর প্রকল্পের কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। জটিলতার জন্য অর্থ প্রদান আটকে ছিল। কয়েকদিন আগে সমস্ত অর্থ ছাড় করে দেওয়া হয়েছে।’
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম শাহানেয়াজ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নয়। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
