সমীকরণ প্রতিবেদন:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি মুহূর্তে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। বিশ্বের ২০৯টি দেশ ও অ লে একযোগে তাণ্ডব চালাচ্ছে এই ভাইরাস। এর বিষাক্ত ছোবলে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ১৭ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখেরও অনেক বেশি মানুষের। মরণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৪ জন। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৪ জনে। এ ছাড়া করোনায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৩৯ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২১ জনে। গতকাল রোববার (১২ এপ্রিল) করোনা ভাইরাস নিয়ে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি এবং কেউ মারাও যাননি। তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই বৃদ্ধার নমুনা ইতিমধ্যে আইইডিসিআরে পাঠানোও হয়েছে।
এদিকে, এ দিকে গাজীপুরে সিভিল সার্জনের র্কারর্্যালয়ের এক নাইটগার্ডসহ ১১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় সিভিল সার্জনসহ ১৭০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। গতকাল লকডাউন করা হয়েছে বরিশাল, লক্ষ্মীপুর ও সুনামগঞ্জ জেলা। এ ছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে শিশুসহ আরো মারা গেছেন ১৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় একজন দন্তচিকিৎসক, সাভারে এক শিশু, বরগুনায় দু’জন, চাঁদপুরে একজন, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে একজন, নারায়ণগঞ্জে দু’জন, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে একজন, কুষ্টিয়ায় একজন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে একজন, ফরিদপুরে একজন ও রাজবাড়ীতে একজন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট এক হাজার ৩৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার দিক দিয়ে এই সংখ্যাটিও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গত মৃত চারজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা। মৃতদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে দুইজন, ৬০ বছর বয়সের মধ্যে একজন এবং ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সের মধ্যে একজন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে তিনজন। এ নিয়ে সর্বমোট সুস্থ হয়েছে ৩৯ জন। যারা সুস্থ হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজন মহিলা এবং একজন পুরুষ। তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন, যিনি সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। নতুন করে চারটি জেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩৫টি জেলায় শনাক্ত হলো। গতকাল রোববার নিয়মিত অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ সব তথ্য জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অর্ধেকই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। অবশিষ্ট ৩৫ শতাংশ ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে। চট্টগ্রামে বিভাগে রয়েছে ছয় শতাংশ এবং অবশিষ্ট করোনা আক্রান্ত অন্যান্য বিভাগের। তিনি আরও বলেন, গতকাল পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল যে নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে এগুলোর মধ্যে ঢাকায় ৬৬১টি এবং ঢাকার বাইরে ৪৯০টি পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে বলে বেশি পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি দুগ্ধদানকারী অথচ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন মা সম্পর্কে বলেন, মা আক্রান্ত হলেও শিশুকে বুকের দুধ পান করানো যাবে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন তথ্য নেই যে, বুকের দুধের মাধ্যমে মায়ের কাছ থেকে শিশুর দেহে এসেছে। আবার মা আক্রান্ত হলেও জরায়ুতে ভাইরাস যায় না অথবা সদ্যজাত শিশু আক্রান্ত হয়ে জন্মায় না। শিশু আক্রান্ত হলে পরে অসতর্কতার কারণে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, কভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যায় ইতালিকে ছাড়িয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র। ফলে আক্রান্ত ও মৃত উভয় দিকেই বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে গেল দেশটি। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে একইদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে। এদিন দেশটির সবগুলো প্রদেশে সবমিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২০০০ জন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মোট মারা গেলেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটিতে এখন সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হুশিয়ারি করেছিলেন যে, আগামি কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন। যদি মানুষ এই সময়ের মধ্যে বাড়িতে অবস্থান না করে তাহলে এ সংখ্য আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ ভাগ মানুষই ‘স্টে হোম’ নির্দেশের আওতায় রয়েছে। দেশটিতে বন্ধ রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্তোরাঁ, পাব, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও কম গুরুত্বপূর্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ মাসের শেষ নাগাদ শিথিল হতে পারে এ নির্দেশ এমনটা আশা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি চান মার্কিনিদের জীবন যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক। গত শনিবার ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, কভিড-১৯ নিয়ে দ্রুতই তিনি সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছেন। এর পূর্বে তিনি চিকিৎসক, ব্যবসায়ী প্রধান ও ‘বুদ্ধিমান এক দল মানুষের’ পরামর্শ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, মানুষ কাজে ফিরতে চায়। আমাদের দ্রুত এ দেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
