
চুয়াডাঙ্গা জেলায় কমেছে পাসের হার, যশোর বোর্ডের মধ্যে অবস্থান ৭ম, শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ
সমীকরণ প্রতিবেদন:
উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন মেয়েরা। এবারের ফলাফলে ছেলেদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৩ এবং মেয়েদের ৮৭ দশমিক ৮৪। এবার মোট জিপিএ-৫ পাওয়ার ছেলেদের সংখ্যা ৮০ হাজার ৫৬১ জন এবং মেয়েদের সংখ্যা ৯৫ হাজার ৭২১ জন। এতে এবারের ফলাফলে জিপিএ-৫ ও পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে আছে। গতকাল বুধবার প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা গেছে, মোট পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
এদিকে, ফল প্রকাশের পর দেশজুড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুর ১২টার পর থেকে ফল জানতে বিভিন্ন কলেজ প্রাঙ্গণে বাড়তে থাকে ফলপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতি। এরপর প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে কর্তৃপক্ষের টানিয়ে দেওয়া ফল দেখে উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দল বেঁধে তাদের উল্লাস আর আনন্দ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। দীর্ঘ সাধনা ও পরিশ্রমের পর কাক্সিক্ষত ফল পেয়ে আনন্দ প্রকাশে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে, ছবি আর সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছেন ৭৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। যা যশোর বোর্ডের মধ্যে পাসের হারের দিক থেকে সপ্তম। তবে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ কম। গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় চুয়াডাঙ্গায় পাসের হার ছিল ৯৭.৬৮ শতাংশ। জানা গেছে, জেলায় এবার ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ৫ হাজার ৭১২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪ হাজার ৫৬৬ জন পাস করেছেন। এদের মধ্যে ২ হাজার ৮৯ জন ছাত্র এবং ২ হাজার ৪৭৭ জন ছাত্রী। ১১টি কেন্দ্র থেকে এসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেন।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান বলেন, এবার শিক্ষার্থীদের ফলাফল বেশ ভালো। এ বছর কলেজ থেকে ৫৭৪ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪৯৫ জন পাশ করেছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮৮ জন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক সফিকুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ৯৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫১৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পাসের হার ৯৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। জিপিএ-৫ এর দিকে চুয়াডাঙ্গার ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ এগিয়ে আছে।
আলমডাঙ্গা:
আলমডাঙ্গায় দুটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ৬১৮ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। গতকাল বুধবার প্রকাশিত ফলাফলে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজে ৫৮২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৫০২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১১৩ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২২ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ৮৮ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এছাড়া আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রি কলেজের ২০১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোনায়েম হোসেন বলেন, ‘আমরা কলেজের সকল পরীক্ষার্থীদের সাধ্যমত তৈরি করেছিলাম। তারা আশানরূপ ফল দিয়েছে। তবে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আরও ভালো ফলাফল আশা করেছিলাম। আমরা আগামীতে আরও ভালো ফালাফল আশা করছি।’
দামুড়হুদা:
সারা দেশের ন্যায় গতকাল বুধবার দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এ বছর আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৪৩৯ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৩০৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৬ জন। বিএম শাখার ১১৬ জনের মধ্যে পাস করেছেন ১১২ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ছয়জন। জেনারেলে ৩২৩ জনের মধ্যে পাস করেছেন ১৯৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০ জন। পাসের হার ৬৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ
দর্শনা:
এইচএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দামুড়হুদা উপজেলায় দর্শনা সরকারি কলেজ শীর্ষে অবস্থান করছে। গতকাল বুধবার প্রকাশিত ফলাফলে দর্শনা সরকারি কলেজের ৯৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। দর্শনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ড. মফিজুর রহমান জানান, কলেজ থেকে এবার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে ৬২০ জন পাস করেছেন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪৭ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ৪৪ জন ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পাসের হার ৮১ শতাংশ। এছাড়া পরীক্ষায় অনুপস্থিত ও পাস করেননি ১৫৫ জন। এদিকে দর্শনা ডিএস ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২১ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। কার্পাসডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৬৬ জন পাস করেছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ।
জীবননগর:
জীবননগর উপজেলায় এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এগিয়ে রয়েছে জীবননগর সরকারি আদশ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এবার জীবননগর উপজেলার ৪টি কলেজ ও ৩টি মাদ্রাসার ৭০৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে জীবননগর ডিগ্রি কলেজ থেকে ২৩২ জন পরীক্ষাথী অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন ২০৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৬ জন। জীবননগর সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের ১৯৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন ১৯১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬১ জন। উথলী মহাবিদ্যালয় থেকে ১১৮ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন ১০১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮ জন। আন্দুলবাড়ীয়া কলেজ থেকে ৪১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন ১৭ জন। জীবননগর উপজেলা আলিম মাদ্রাসা থেকে ৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন ৩০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ জন। হাসাদহ মডেল কামিল মাদ্রাসা থেকে ৬৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন ৬৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭ জন। আন্দুলবাড়ীয়া আশরাফিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ১৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন ১৪ জন শিক্ষার্থী। জীবননগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মিলিত চেষ্টায় এবার ভালো ফল সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়নি, তার প্রমাণ এবারের ফল। আশা করি আগামীতে আরও ভালো ফলাফল হবে।
হরিণাকাণ্ডু:
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলার সালেহা বেগম মহিলা ডিগ্রি কলেজের ৫২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এ ফলাফল অত্র প্রতিষ্ঠানের পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এছাড়া ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়ে হরিণাকুণ্ড উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের হয়েছে। গতকাল বুধবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা আনন্দে মুখরিত হন। এ সাফল্য অর্জনের জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন সালেহা বেগম মহিলা ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. রওশন আলী এবং অধ্যক্ষ মো. মোক্তার আলী।
৯টি বোর্ডের ফলাফল:
এদিকে, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪২১ জন শিক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থী। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৯১ জন শিক্ষার্থী। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন চার হাজার ৮৭১ জন। বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন সাত হাজার ৩৮৬ জন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষার্থী। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৭০৩ জন শিক্ষার্থী। দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ০৮ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৩০ জন শিক্ষার্থী। ময়মনসিংহ বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮ জন। অন্যদিকে, পাসের হারে এবার এগিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। তবে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ফলাফলে দেখা গেছে, মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৪২৩ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডে পাস করেছেন ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী, এই বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছেন সাত হাজার ১০৪ জন শিক্ষার্থী।