‘বলেছিলাম না আমিই সেরা’

-20160813165427

সমীকরণ ডেস্ক: অপেক্ষায় ছিলেন একটি বাক্য বলার। অনেকেই তার ক্ষেত্রে এই বাক্য প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু উসাইন বোল্ট নিজে কখনো দাবি করেননি। তবে নিজেকে স্প্রিন্টের ‘কিংবদন্তি’ ও ‘অমর’ বলে দাবি করেছেন। জ্যামাইকান গতিমানব দুদিন আগে বলেছিলেন, তিনি মোহাম্মদ আলী ও পেলের মতো ক্রীড়াক্ষেত্রের ‘গ্রেটেস্ট’ হতে চান। রিও-অলিম্পিকের ৪ী১০০ মিটার রিলে জিতলেই তিনি তাদের মতো গ্রেটেস্ট হয়ে যাবেন। এখন উসাইন বোল্টকে গ্রেটেস্ট বলা যেতেই পারে। ১০০ ও ২০০ মিটারের পর দলীয় রিলেতেও তিনি সোনা জিতেছেন। এতে নিজেকে তিনি নিয়ে গেলেন অন্য উচ্চতায়। জিতলেন ‘ট্রিপল ট্রিপল’ সোনা। বোল্টের আগে অলিম্পিকে স্প্রিন্টের এক আসরে তিন সোনা জয়ের কোনো ঘটনা ছিল না। কিন্তু উসাইন বোল্ট এমন কাজ করলেন তিনবার। তার এই জয়ের ধারা শুরু হয় ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে। সেবার ১০০, ২০০ ও দলীয় ৪ক্ম১০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতেছিলেন উসাইন বোল্ট। এরপর ২০১২-লন্ডন অলিম্পিকেও একই কীর্তি গড়েন। আর এবার ব্রাজিলের রিও’তে স্প্রিন্টের তিন ইভেন্টে সোনা জিতে ‘ট্রিপল ট্রিপল’ পূর্ণ করলেন এ ‘বজ্রবিদ্যুৎ’। রিও’তে ব্যক্তিগত ১০০ ও ২০০ মিটারে আগেই সোনা নিশ্চিত করেন তিনি। আর গতকাল সকাল সাড়ে সাতটায় জিতলেন দলীয় ৪ক্ম১০০ মিটার রিলের সোনা। আসাফা পাওয়েল, ইয়োহান ব্লেক ও নিকেল আশমেয়াদের সঙ্গে বোল্ট এই সোনা জিততে সময় নিলেন ৩৭.২৭ সেকেন্ড। এই সোনা জিতে বোল্ট নিজেকেই ‘কিংবদন্তি’ বলে দাবি করলেন। গলা ছেড়ে বললেন, ‘বলেছিলাম না, আমিই সেরা আমিই গ্রেটেস্ট’। দলীয় এ দৌড়ে জাপান রূপা ও কানাডা দল জিতেছে ব্রোঞ্জ পদক। এইসঙ্গে রিও অলিম্পিকে সোনার হ্যাটট্রিক দিয়ে ক্যারিয়ারের অলিম্পিক মিশন শেষ করলেন উসাইন বোল্ট। এ বছর ফেব্রুয়ারিতেই তিনি ঘোষণা দেন যে, ২০১৭ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেই তিনি বিদায় নিবেন। ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে তিনি দৌড়াবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। এতে স্প্রিন্টের কিংবদন্তির অলিম্পিক মিশন এখানেই শেষ হলো। তবে অলিম্পিকে ক্যারিয়ার শেষ করার আগে এমন কীর্তি গড়ে গেলেন যা ভাঙা অত্যন্ত দুরূহ কাজই বটে। অ্যাথলেটিকসের ইতিহাসে নজর দিলে বুঝা যায়, বোল্টের এ কীর্তি ভাঙা খুবই কঠিন।
অলিম্পিকে বোল্টের মোট সোনা এখন ৯টি। স্প্রিন্টের ইতিহাসে তিনি ছাড়া আর কেউ এখনও ৯ সোনা জিততে পারেননি। অ্যাথলেটিকসে অবশ্য ৯ সোনা আছে দুইজনের-যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইস ও  দৌড়বিদ পাভো নুরমির। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে লুইস আর ১৯২০ থেকে ১৯২৮ সালের মধ্যে নুরমি ৯টি করে সোনা জেতেন। তবে তাদেরকে বোল্টের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কারণ, লুইসের সবগুলো সোনা স্প্রিন্টে নয়। এরমধ্যে চারটি এসেছে লং জাম্প থেকে। আর নুরমি তো ছিলেন দূরপাল্লার দৌড়বিদ। আসলে সাঁতার ছাড়া এত সোনা জেতা অনেকটা অসম্ভব। সাঁতারের বেশ কয়েকটি ইভেন্ট থাকে। কিন্তু স্প্রিন্টে তিনটি ইভেন্টে সীমাবদ্ধ। এ কারণেই মার্কিন সাঁতারু মাইকেল ফেলপস অলিম্পিকে ২৩ সোনা জিতলেও বোল্টের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি। সোনা কম জিতলেও ফেলপসের চেয়ে একদিক দিয়ে এগিয়ে বোল্ট। ফেলপস বেশ কয়েকটি ফাইনালে হেরেছেন। কিন্তু অলিম্পিকের কোনো ইভেন্টের ফাইনালে উঠে সোনা না জিতে থাকেননি বোল্ট। বোল্টকেই আসল গ্রেটেস্ট বলা যেতে পারে। বোল্টের সঙ্গে তার সতীর্থ ইয়োহান ব্লেক বললেন, ‘৯টি সোনার মেডেল উসাইনকে অমর করে দিলো। সে আসলে গ্রেটেস্ট-এর চেয়ে বেশি কিছু।’