বগুড়ার আনোয়ার সাইকেল ভ্রমনে ৬৪ জেলা শেষ করে ৫৫০ উপজেলা ভ্রমনের উদ্দেশে আলমডাঙ্গায় আগমন

বিক্রম সাদিক/ খ. হামিদুল আজম: বগুড়া জেলার আনোয়ার হোসেন পেশায় কাঠ মিস্ত্রী, বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই, তবে মনে দৃঢ় প্রত্যয়। বাল্যবিবাহ বন্ধে সোচ্চার, এ বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধির লক্ষে লাল রংয়ের বাই সাইকেলে ইতোমধ্যে ৬৪ জেলা ভ্রমন শেষ করেছেন। এবার ছুটে চলেছেন দেশের ৫৫০টি উপজেলায়। বগুড়া সদর উপজেলার বারপুর উত্তরপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ইতোমধ্যে ৬৭দিনে ৬৪জেলা পার করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় অফিসের সামনে পেয়ে গেলাম লাল আনোয়ারকে। আমি নিজেউ দাড় করিয়ে লাল রংয়ের গল্প শুনলাম। তার সাইকেলের সামনে জাতীয় পতাকা ও লাল পতাকা, তার পরনে লাল পায়জামা, লাল টি শার্ট ও লাল সোয়েটার। জিজ্ঞাসা করতেই একটায় ডায়লগ দিলেন বাল্য বিয়েকে লাল কার্ড দেখাতে তার এই লালে লাল হওয়া। সে আমাকে আরো বললো, বাল্য বিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে সবার জন্য বিপদজ্জনক। লাল পোষাক, সাইকেল, পতাকার মাধ্যমে আমি বোঝাতে চেয়েছি বাল্য বিয়ে আসলেই বিপদজ্জনক। অভাব অনটনের কারনে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন আনোয়ার হোসেন। এরপর কাজ নেন বগুড়া শহরের একটি রেস্তরায়, ২ বছর পর চলে যান চট্টগ্রামে, সেখানে আগ্রাবাদ এলাকায় একটি আসবাব পত্রের দোকানে কাঠ মিস্ত্রীর কাজ নেন। চট্টগ্রাম কদমতলি এলাকায় থাকতেন। দুই যুগ পর চট্টগ্রাম ছেড়ে কুমিল¬ার দাউদকান্দি যান। সেখানে আসবাবের দোকান দেন। চট্টগ্রামে থাকতেই তার ২ভাগ্নির ১৪/১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। পরে ২জনই স্বামী পরিত্যাক্ত হয়ে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ নিলে মামা আনোয়ারের মন খারাপ হয়। তিনি তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নেন বাল্য বিয়ে বিরুদ্ধে কাজ করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ দোকান বিক্রি করে পুরানো একটি সাইকেল কেনেন। কিছু প্রচার পত্রও ছাপান। ২০১৫ সালের নভেম্বরে লালে লাল হয়ে সাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়েন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাতে। শহর ঘুরে মানুষের হাতে তুলে দেনন বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারপত্র। এসময় তিনি দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মেয়র, চেয়ারম্যানসহ বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে লিখিত মন্তব্য সংগ্রহ করেন এবং করছেন। তার এই বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচার অভিযানের খবর ইতোমধ্যে দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো, চ্যানেল আই, মাছ রাঙা টেলিভিশন প্রচার করেছেন আনোয়ারের ছবি ও ফুটেজ দিয়ে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং এর কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আনোয়ার হোসেন সাইকেলযোগে ৬৪জেলার উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারাভিযানে বের হয়েছেন। জনসচেতনতামূলক এই উদ্যোগে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো এই শিরোনামে বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক শফিকুর রেজা বিশ্বাস তাঁকে প্রত্যয়নপত্র দেন। এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার(ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, একজন হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের বাল্যবিবাহ বন্ধের এই প্রচেষ্টা সবার জন্য অনপ্রেরণা জোগাবে।  বাল্যবিবাহ বন্ধের এ রকম ফেরিওয়ালার হাত ধরেই একদিন ‘বাল্যবিয়েমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়া সম্ভব হবে।কোথাও বাল্যবিবাহের খবর পেলেই সেভানে ছুটে যান। বাল্যবিবাহের নানা খারাপ দিক ও পরিণতির কথা অভিভাবকদের কাছে তুলে ধরেন। সপ্তাহে অন্তত সাতটা সরকারি প্রাথমিক ও বালিকা বিদ্যালয়ে বাল্যবিবাহবিরোধী প্রচার চালান