সমীকরণ প্রতিবেদন: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার বেলা ৩টায় মুক্তারপুরের পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গুরুতর আহত গুলিবিদ্ধ দুই বিএনপি কর্মীকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোড়া গুলি, লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপে গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক আহত হয়েছে। অপর দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে ৩৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে চারজন সাংবাদিকও রয়েছেন। সংঘর্ষের পর পুলিশ অন্তত ৪০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। বিএনপির আহত নেতাকর্মীরা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে কোনো চিকিৎসা নেননি। তারা গ্রেফতারের ভয়ে গোপনে অন্যত্র চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির গুরুতর আহত সাবেক ছাত্রনেতা মাসুদ রানা, জাহাঙ্গীর মোল্লা, গুলিবিদ্ধ শাওন ও হারুনের নাম পাওয়া গেলেও অন্যদের নাম এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। শাওন ও হারুনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের এক কর্মকর্তা তাদের কর্মসূচির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহুর্মুহু ছোড়া কাঁদানে গ্যাস, গুলি ও রাবার বুলেটে তাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
অন্য দিকে পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছে। এতে পুলিশের ৩৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বুধবার বেলা ৩টায় মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা ছিল। ঘোষণা অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মিছিল এখানে আসতে থাকে। পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিলকারীদের থামিয়ে ফিরিয়ে দিতে থাকে। পরে আগত মিছিলকারীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন পথে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় জরো হয়। বিক্ষোভের জন্য পুলিশের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেয়া হয় বলে জানায় বিএনপি। তবে প্রায় দুই হাজার লোকের সমাবেশ হওয়ার কথা। কিন্তু বিক্ষোভে পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত হন। অন্য দিকে ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো পুলিশ সদস্য ছিল। বিক্ষোভ মিছিল শুরুর আগেই পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্ধারিত লোকজন নিয়ে সমাবেশ করতে বলে। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশ ও বিএনপির নেতাদের সাথে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে।
বিএনপি সেখানে পুলিশের ওপর হামলার প্রস্তুতি হিসেবে আগেই ইটপাটকেল জরো করে রেখেছিল বলে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে পুলিশ। তা না হলে এখানে পুলিশের এত সদস্য আহত হলো কিভাবে? যেসব পুলিশ আহত হয়েছে তারা সবাই ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছে। এখানে এ ঘটনার সময়ে অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেলে কে বা কারা আগুন দিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এখানে এ সময়ে ডিবি পুলিশের মোটরসাইকেলও খোয়া যায়।
জানা যায়, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। বেলা আড়াইটা থেকে মুক্তারপুর এলাকার আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। পুলিশও আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেয়। বিকেল ৩টার দিকে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে ওই এলাকায় আসতে শুরু করে।
এ সময় পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন তারা। পুলিশও ফাঁকাগুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তেই চার দিক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের আটটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয় বেশ কয়েকজনকে।
সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। মিছিলের ব্যানার কেড়ে নেয় ও লাঠি চার্জ করে। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। পুলিশ টিয়ার শেল ও গুলি ছোড়ে। এতে আমাদের ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃদুল দাস বলেন, আহতদের মধ্যে মো: শাওন, মো: জাহাঙ্গীর আলম ও মো: তারেককে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে শাওনের অবস্থা গুরুতর।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মহিউদ্দিন জানান, বিএনপি কাপুরুষের মতো নিজের বাড়ির সামনে সমাবেশ করেছে এবং পুলিশের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। যেসব পুলিশ ভাইয়েরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে তাদের ওপর হামলা করেছে। এই হামলাকারীদের কোনো অবস্থাতেই ছেড়ে দেয়া যাবে না।
এ বিষয়ে সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সেই বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চার্জ করি। লাঠিচার্জেও নিয়ন্ত্রণে না এলে এক পর্যায়ে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করি। কিন্তু তাতেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে ৩০-৩৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।