
আওয়াল হোসেন ও ওয়াসিম রয়েলের প্রতিবেদন:
শান্তিপূর্ণ ভোটের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে দর্শনা কেরু শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিকী নির্বাচন। ১ হাজার ১৯৮ ভোটারের অনুকূলে ১৩ পদের জন্য ৪৭ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশ নেন। এদের মধ্যে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুদুর রহমান মাসুদ প্যানেল পুনরায় নির্বাচিত হয়েছে। এ নির্বাচিত প্রার্থীরা গত দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে প্যানেল করে নির্বাচিত হন। তারই ধারাবাহিকতায় সভাপতি প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাসুদুর রহমান মাসুদ ভোটের একদিন আগে প্যানেল ঘোষণা করেন। ভোটের মাধ্যমে এ জুটি দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হলেন। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে দুজন প্রার্থীর মধ্যে ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ (ছাতা) প্রকীত নিয়ে সর্বোচ্চ ৭৬৫টি ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৈয়ব আলী (বাইসাইকেল) প্রতীকে ভোট পেয়েছে ৪০৫টি। সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে মাসুদুর রহমান মাসুদ (চাঁদতারা) প্রতীকে ৭০২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (আনরস) প্রতীকে ৩৬০ ভোট ও জয়নাল আবেদীন নফর (হারিকেন) প্রতীকে ১০২ ভোট পেয়েছেন।
গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে দর্শনা কেরুজ নতুন উচ্চবিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হয়। ভোট গ্রহণ শেষে প্রাপ্ত ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও অন্য পদে বিজয়ীরা হলেন- সহসভাপতি পদে চারজন প্রার্থীর মধ্যে মফিজুল ইসলাম (তালাচাবি) ৫২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম (টেবিল) প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯৬ ভোট। একই পদে আনিসুর রহমান (গরুর গাড়ী) প্রতীকে ১৮১ ভোট এবং এএসএম কবির (কলস) প্রতীকে ৪৭১ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছে। সহসাধারণ সম্পাদক ২টি পদের জন্য ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে হাঁস প্রতীকে হাফিজুর রহমান ৫৯৮ ভোট ও চেয়ার প্রতীকে মোস্তাফিজুর রহমান ৫৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও খবির হোসেন (আম) প্রতীকে ৩৮৩ ভোট, আতিয়ার রহমান (মাছ) প্রতীকে ১৬৯ ভোট এবং মহিদুল ইসলাম (হাতপাখা) প্রতীকে ৮২ ভোট পেয়েছেন।
সাংগঠনিক পদে ২ জন প্রার্থীর মধ্যে ইকবাল হোসেন (কাপ-পিরিচ) প্রতীকে ৫৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাবুল আক্তার (প্রজাপতি) প্রতীকে ৫৩৫ ভোট পেয়েছেন। দপ্তর সম্পাদক পদে ২ জন প্রার্থীর মধ্যে সালাহ উদ্দিন সনেট (উড়োজাহাজ) প্রতীকে ৭২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল হোসেন (হরিন) প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯৫ ভোট। প্রচার সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশ নেয়। এদের মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস (মোবাইল) প্রতীকে ৫৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে মিজানুর রহমান (মোরগ) প্রতীকে ৩৪২, ইয়াছির আরাফাত মিলন (কুঁড়েঘর) প্রতীকে ১৫৩ ভোট পেয়েছেন।
কোষধ্যক্ষ পদে দুজন প্রার্থী ভোটে অংশ নেয়। এর মধ্যে কাঁঠাল প্রতীকে ৬৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আবু সাঈদ হোসেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খন্দকার কায়েস আব্দুল্লাহ (রিকশা) প্রতীকে পেয়েছেন ৪২৫ ভোট। সদস্য ১ নম্বর ওয়ার্ড প্রশাসন ও হিসাব বিভাগে সেলিম খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। চোলাই কারখানা বিভাগে ২টি পদের অনুকূলে ৩জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়ে আমিরুল ইসলাম (ডাব) প্রতীকে ১০৯ ভোট ও বাবর আলী (বেলচা) প্রতীকে ৯০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এবং তাঁদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাস আলী পেয়েছেন ৪১ ভোট। পরিবহন বিভাগ (গ্যারেজ) ২টি পদের জন্য ৫ জন ভোট যুদ্ধে লড়াই করে শরিফুল ইসলাম-১ (টর্চলাইট) প্রতীকে ১৩১ ভোট ও বাবুল আক্তার (গোলটুপি) প্রতীকে ৯০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অপর প্রার্থী শরিফুল ইসলাম (আখের আটি) প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ ভোট, মোজাহারুল ইসলাম (হাতুঁড়ি) প্রতীকে ১২ এবং জাহিদুল ইসলাম (ডাব) প্রতীকে ২০ ভোট পেয়েছেন।
ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগে ২টি পদের জন্য ৩ জন প্রার্থী ভোটে অংশ নেন। এর মধ্যে সাহেব আলী (টর্চলাইট) প্রতীকে ৭৯ ভোট ও হাফিজুল ইসলাম ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এবং ডাব প্রতীকে ৫৭ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন সাইফুদ্দিন সুমন। উৎপাদন বিভাগে ৩টি পদের জন্য ভোটে অংশ নিয়ে মজিবর রহমান, নুরুল ইসলাম ও মাজেদুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। প্রকৌশল বিভাগের ৩টি পদের জন্য ৬ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশ নেয়। এদের মধ্যে আজাদ হোসেন (হাতুড়ি) প্রতীকে ১৩০ ভোট, ইদ্রিস আলী (ডাব) প্রতীকে ১০৪ ও জহিরুল ইসলাম (বালতি) প্রতীকে নির্র্বাচিত হয়েছেন। পরাজিত ৩ জনের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম (গাভী) প্রতীকে ৬৩, তারাপদ বিশ^াস (আখেঁর আটি) প্রতীকে ৫৮ ও রবিউল ইসলাস (বেলচা) প্রতীকে ৩৫ ভোট পেয়েছেন।
এ নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন ও ফলাফল ঘোষণা করেন কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘আমার নির্বাচন সফলভাবে সমাপ্তি করতে পেরেছি, এ জন্য সকলকে ধন্যবাদ। কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯টি কক্ষে ১৮ গোপন বুথে ভোটারা তাদের ভোট প্রদান করেন। ১ হাজার ১৯৮ জন ভোটার তাদের ভোট প্রদান করেন।’ এদিকে, দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবিরের নেতৃত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, ডিবি পুলিশসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে শান্তিপূর্ণভাবে কেরুজ শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।