
বিপন্ন পুঁজিবাজারে সঙ্কট ও অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আবারো সঙ্কটে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের পুঁজি হারিয়ে যাচ্ছে নিয়মিতই। গত এক সপ্তাহে ঢাকার পুঁজিবাজারে টাকার অঙ্কে পুঁজি কমেছে এক হাজার ৬২১ কোটি ৭১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯২ টাকা। একটি জাতীয় দৈনিকের খবর অনুযায়ী, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের সাত দিনে লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। এ সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা। যার মোট লেনদেনের ৪২ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে। ওই ১০ কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৪৬৩ কোটি টাকা।
ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর মূলধন ছিল সাত লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার ৯৪০ টাকা। আর শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার সেই মূলধন কমে এসে দাঁড়ায় সাত লাখ ৬২ হাজার ২২৬ কোটি ৯৮ লাখ ৩১ হাজার ১৪৮ টাকায়। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে পুঁজি কমেছে এক হাজার ৬২১ কোটি ৭১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯২ টাকা। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) প্রায় একই অবস্থা।
খবরে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করার কারণেই সমস্যা জটিল হয়েছে। বাজার অর্থনীতির নিয়মে চলতে না দিয়ে কৃত্রিমভাবে পুঁজিবাজারে গতি আনার চেষ্টা করা হয়েছে, যা হিতে বিপরীত ফল দিয়েছে। বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা পত্রিকাকে জানিয়েছেন, কমিশনের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে পথে বসেছেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী লাখ লাখ মানুষ। তারা পুঁজিবাজারে বর্তমান ধসের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন ফ্লোর প্রাইস নামক কমিশনের বিধানকে। এ বিধি অনুযায়ী কোনো কোম্পানির শেয়ারের দামে ধস নামলেও তা নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচের দামে লেনদেন করা যাবে না। অর্থাৎ দাম যতই কমুক, বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দামে সেটি বিক্রি করতে হবে। বলা হচ্ছে, বিএসইসি এমন আরো কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক উদ্যোগ নিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হয়েছে। ফলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখন তলানিতে নেমে এসেছে। বিপুল বিনিয়োগকারী এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময়ে বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজার ধ্বংস হয়েছে। এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পুঁজিপতি নানা কৌশলে বাজার লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। দু’-একবার তদন্তে কারো কারো নামও এসেছে অভিযুক্ত হিসেবে কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। শেয়ারবাজার ধ্বংসকারীরা কেবল যে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন তাই নয়, তারা পরে আবারো একইরকম সুযোগ তৈরি করেছেন।
একসময় পুঁজি হারিয়ে পথে বসা খুদে বিনিয়োগকারীরা প্রতিবাদ করতেন রাজপথে মিছিল করে। চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে প্রতিকার দাবি করতেন। এতে হয়তো তাদের ক্ষোভ হতাশার এক ধরনের উপশম ঘটত। এখন সেই সুযোগও নেই। পুলিশ ও পেটোয়া বাহিনী নিরীহ নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের ওপর চড়াও হয়।
গত বছর পুঁজিবাজারের এমনই সঙ্কট বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেছিলেন, সরকারের সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্যোগ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। তিনি দেশের ও সামগ্রিকভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়টিও উল্লেখ করেন, যে কারণে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা কিছুুটা কম।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে নানামুখী সঙ্কট প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, ডলারের মজুদ কমে যাওয়া, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ভাটার টান, রফতানিতে ধস ইত্যাদি নানা কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সামর্থ্য বা আগ্রহ উভয় ক্রমহ্রাসমান। এমন এক পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার চাঙ্গা হওয়ার আশা করা কঠিন। রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। কারণ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে কেবল পুঁজিবাজারসহ সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক ফল লাভ সম্ভব।