ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

পায়রা-রামপালের চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি আদানির

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে

২০২৩ সালের জুনের শেষ দিকে আদানির ঝাড়খণ্ডের গড্ডা কেন্দ্র থেকে পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করেছে তারও দুই বছর আগে। তবে রামপালের দুটি ইউনিট চালু হয়েছে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের শেষ দিকে। এর আগে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। বেসরকারি খাতে স্থাপিত সর্ববৃহৎ এ তিন কেন্দ্রের মধ্যে আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ছে সবচেয়ে বেশি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে উৎপাদন ব্যয়ের এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কয়লাভিত্তিক এ তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি পাওয়ার। তবে এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় জ্বালানি ব্যয় ও গড় ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি পড়েছে। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (ভিওএমপি) পায়, যা পায়রা ও রামপালের ক্ষেত্রে নেই।
পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে পরিচালিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। কয়লা সংকটে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যায়নি। শীতে চাহিদা কম থাকায় জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রটির সক্ষমতার ৪১ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে ৬০ দশমিক ২৩ শতাংশ ও মার্চে ৬৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে কেন্দ্রটির সক্ষমতার। তিন মাসে কেন্দ্রটি থেকে ১৬১ কোটি ৫৭ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। এতে জ্বালানি ব্যয় পড়েছে ৯৮৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়েছে এক হাজার ১০৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ব্যয় পড়ে দুই হাজার ৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এতে পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়েছে ১২ টাকা ৯৬ পয়সা। এর মধ্যে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ ছয় টাকা ৮৪ পয়সা ও গড় জ্বালানি ব্যয় ছয় টাকা ০৯ পয়সা।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এর একটি ইউনিট চালু থাকলেও কয়লা সংকটে তা জানুয়ারি মাসে চলেছে মাত্র ৩৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৪১ দশমিক ৭২ শতাংশ। তবে মার্চে তা প্রায় পুরোদমে চলে। ওই মাসে সক্ষমতার প্রায় ৭৩ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। তিন মাসে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৬৮ কোটি ৪৭ লাখ ইউনিট। এ সময় রামপালের জ্বালানি ব্যয় ছিল প্রায় ৪৯৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ও ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৯৪২ কোটি ৭ লাখ টাকা। এতে গড় উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ টাকা ৭৬ পয়সা। এর মধ্যে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ ছয় টাকা ৫১ পয়সা ও গড় জ্বালানি ব্যয় সোয়া সাত টাকা।
এদিকে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। জানুয়ারি মাসে এর সক্ষমতার ৬৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও মার্চে ৭২ দশমিক ৮৪ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। ফলে কেন্দ্রটিতে তিন মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ২১৪ কোটি ৭৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এসময় আদানির কেন্দ্রটিতে জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয় এক হাজার ৭৮০ কোটি ৩১ লাখ টাকা, ক্যাপাসিটি চার্জ এক হাজার ৪০১ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং ভিওএমপি ৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট উৎপাদন ব্যয় পড়ে তিন হাজার ১৯১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এতে গড় উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ১৪ টাকা ৮৬ পয়সা। এর মধ্যে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ ছয় টাকা ৫২ পয়সা, গড় জ্বালানি ব্যয় সাত টাকা ৬৭ পয়সা এবং গড় ভিওএমপি ৬৭ পয়সা।
জানতে চাইলে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ব্যয় প্রাথমিকভাবে পায়রার তুলনায় অনেক বেশি ধরা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রটি চালুর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ নিয়ে আপত্তি তুলে চিঠি দেয়া হয়। এরপর দুই পক্ষের দরকষাকষির পর আদানি জ্বালানি তথা কয়লার দাম কম রাখতে সম্মত হয়। গত বছর ১ জুলাই এক চিঠিতে এ প্রসঙ্গে আদানি জানায়, বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর কয়লা দিয়ে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল কেন্দ্রের চেয়ে আদানির জ্বালানি ব্যয় দশমিক শূন্য এক সেন্ট (০.০১) কম রাখা হবে। প্রতি মাসে এ দাম সমন্বয় করা হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়। তারা আরও বলেন, আদানির বিল জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জ্বালানি বিল পায়রা ও রামপালের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মার্চে তারা জ্বালানি ব্যয় সমন্বয় করে রামপালের চেয়ে কম রেটে বিল দাখিল করেছে। যদিও তিন মাসের গড়ে জ্বালানি বিল কিছুটা বেশি পড়েছে। তবে পায়রা কেন্দ্রটিতে কয়লা কেনা হয়েছে অনেক কমে। ফলে তাদের গড় জ্বালানি বিল অনেক কমে গেছে। এতে আদানির পক্ষে পায়রার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পায়রা-রামপালের চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি আদানির

আপলোড টাইম : ০৮:০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

২০২৩ সালের জুনের শেষ দিকে আদানির ঝাড়খণ্ডের গড্ডা কেন্দ্র থেকে পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করেছে তারও দুই বছর আগে। তবে রামপালের দুটি ইউনিট চালু হয়েছে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের শেষ দিকে। এর আগে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। বেসরকারি খাতে স্থাপিত সর্ববৃহৎ এ তিন কেন্দ্রের মধ্যে আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ছে সবচেয়ে বেশি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে উৎপাদন ব্যয়ের এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কয়লাভিত্তিক এ তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি পাওয়ার। তবে এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় জ্বালানি ব্যয় ও গড় ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি পড়েছে। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (ভিওএমপি) পায়, যা পায়রা ও রামপালের ক্ষেত্রে নেই।
পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে পরিচালিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। কয়লা সংকটে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যায়নি। শীতে চাহিদা কম থাকায় জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রটির সক্ষমতার ৪১ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে ৬০ দশমিক ২৩ শতাংশ ও মার্চে ৬৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে কেন্দ্রটির সক্ষমতার। তিন মাসে কেন্দ্রটি থেকে ১৬১ কোটি ৫৭ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। এতে জ্বালানি ব্যয় পড়েছে ৯৮৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়েছে এক হাজার ১০৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ব্যয় পড়ে দুই হাজার ৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এতে পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়েছে ১২ টাকা ৯৬ পয়সা। এর মধ্যে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ ছয় টাকা ৮৪ পয়সা ও গড় জ্বালানি ব্যয় ছয় টাকা ০৯ পয়সা।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এর একটি ইউনিট চালু থাকলেও কয়লা সংকটে তা জানুয়ারি মাসে চলেছে মাত্র ৩৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৪১ দশমিক ৭২ শতাংশ। তবে মার্চে তা প্রায় পুরোদমে চলে। ওই মাসে সক্ষমতার প্রায় ৭৩ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। তিন মাসে কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৬৮ কোটি ৪৭ লাখ ইউনিট। এ সময় রামপালের জ্বালানি ব্যয় ছিল প্রায় ৪৯৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ও ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৯৪২ কোটি ৭ লাখ টাকা। এতে গড় উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ টাকা ৭৬ পয়সা। এর মধ্যে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ ছয় টাকা ৫১ পয়সা ও গড় জ্বালানি ব্যয় সোয়া সাত টাকা।
এদিকে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। জানুয়ারি মাসে এর সক্ষমতার ৬৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও মার্চে ৭২ দশমিক ৮৪ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। ফলে কেন্দ্রটিতে তিন মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ২১৪ কোটি ৭৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এসময় আদানির কেন্দ্রটিতে জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয় এক হাজার ৭৮০ কোটি ৩১ লাখ টাকা, ক্যাপাসিটি চার্জ এক হাজার ৪০১ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং ভিওএমপি ৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট উৎপাদন ব্যয় পড়ে তিন হাজার ১৯১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এতে গড় উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ১৪ টাকা ৮৬ পয়সা। এর মধ্যে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ ছয় টাকা ৫২ পয়সা, গড় জ্বালানি ব্যয় সাত টাকা ৬৭ পয়সা এবং গড় ভিওএমপি ৬৭ পয়সা।
জানতে চাইলে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ব্যয় প্রাথমিকভাবে পায়রার তুলনায় অনেক বেশি ধরা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রটি চালুর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ নিয়ে আপত্তি তুলে চিঠি দেয়া হয়। এরপর দুই পক্ষের দরকষাকষির পর আদানি জ্বালানি তথা কয়লার দাম কম রাখতে সম্মত হয়। গত বছর ১ জুলাই এক চিঠিতে এ প্রসঙ্গে আদানি জানায়, বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর কয়লা দিয়ে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল কেন্দ্রের চেয়ে আদানির জ্বালানি ব্যয় দশমিক শূন্য এক সেন্ট (০.০১) কম রাখা হবে। প্রতি মাসে এ দাম সমন্বয় করা হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়। তারা আরও বলেন, আদানির বিল জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জ্বালানি বিল পায়রা ও রামপালের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মার্চে তারা জ্বালানি ব্যয় সমন্বয় করে রামপালের চেয়ে কম রেটে বিল দাখিল করেছে। যদিও তিন মাসের গড়ে জ্বালানি বিল কিছুটা বেশি পড়েছে। তবে পায়রা কেন্দ্রটিতে কয়লা কেনা হয়েছে অনেক কমে। ফলে তাদের গড় জ্বালানি বিল অনেক কমে গেছে। এতে আদানির পক্ষে পায়রার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।