পাঠকের প্রতি একান্ত নিবেদন
-নাজমুল হক স্বপন
প্রধান সম্পাদক, দৈনিক সময়ের সমীকরণ
দৈনিক সময়ের সমীরকরণ-এর সম্মানিত পাঠক, ক্রেতা ও শুভান্যুধ্যায়ীদের প্রতি আমাদের আজকের এই একান্ত নিবেদন। সংবাদপত্র শিল্পে উদ্ভূত সর্বশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কিছু বক্তব্য উপস্থাপন জরুরি মনে করছি। সার্বিকভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িত সবাইকে এবং বিশেষ করে সময়ের সমীকরণে আমাদেরকে প্রতিদিন যে কঠিন চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই নিবেদন।
সংবাদপত্রের মূল কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে শতভাগের বেশি। গত বছর জুনে যে দাম ছিল প্রতি টন গড়ে ৪৩ হাজার টাকা, সেটিই এখন কিনতে হচ্ছে ৮৬ হাজার থেকে ৯৬ হাজার টাকায়। শিগগিরই তা লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা-ও কেউ জানে না। একই সাথে বিপুলভাবে বেড়েছে প্রিন্টিংয়ের ব্যয়ও। কালি, প্লেট ইত্যাদির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নিউজপ্রিন্টের চাহিদা বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়া এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ার কারণ। সব মিলিয়ে সংবাদপত্রের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এ ব্যয় বহনে বেশির ভাগ পত্রিকাই হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে সংবাদপত্রের আয়ের প্রধান উৎস বিজ্ঞাপন। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার একই কারণে জনগণ যে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে সে জন্যে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি একটি দৈনিক পত্রিকা কেনাও অনেকের কাছে বিলাসিতার বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে পত্রিকার দৈনিক বিক্রিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। সার্বিকভাবে সংবাদপত্র শিল্প এখন সর্বকালের কঠিনতম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
এরই মধ্যে বেশ কিছু জনপ্রিয় পত্রিকা তাদের প্রকাশনার কলেবর কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। শুধু কলেবরই কমেনি, অনেক পত্রিকার সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতনভাতা দেয়াও দূরূহ হয়ে পড়েছে। বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ছে অনেক পত্রিকায়। কিছু পত্রিকা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে এমনকি বন্ধও হয়ে গেছে। বেকার হয়েছেন অনেক সাংবাদিক-কর্মচারী। সংবাদপত্র শিল্পের আকাশে ঘনিয়ে ওঠা এই কালো মেঘ সহসা কেটে যাবে এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
প্রিয় পাঠক ও ক্রেতাদের প্রতি আমাদের নিবেদন, বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতি সার্বিকভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার পর আমরা বলতে চাই যে, আমরা সময়ের সমীকরণ-এর প্রতি কপির দাম সমন্বয় করতে বাধ্য হয়েছি। পত্রিকার কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আমাদের শুভান্যুধ্যায়ীদের সাথে আলোচনা করে আমরা যৌক্তিকভাবে সবচেয়ে কম পরিমাণে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আগামী ২৫ জুলাই ২০২২ থেকে নোয়াবের সব সদস্য পত্রিকার মূল্য ন্যূনতম ২ টাকা করে বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুসারে ১০ টাকার পত্রিকার দাম ১২ টাকা হবে। আর যেসব পত্রিকার মূল্য ৫ টাকা সেগুলোর মূল্য হবে ৭ টাকা। সেই অনুয়ায়ী আমাদের আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো ৩ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা হওয়াই শ্রেয়। তারপরও আমরা পাঠকের মতামতকে গুরুত্ব দেব।
আমরা জানি, গোটা দেশবাসীর মতো আমাদের পাঠক ক্রেতারাও আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিদ্যমান এই বিরূপ সময়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বাড়ানোর বিষয়টি তারা মেনে নেবেন এমন আস্থা আমাদের রয়েছে।
বি:দ্র: নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আগামী ২৫ জুলাই ২০২২ থেকে পত্রিকার বর্ধিতমূল্য চালু করবে। তবে দৈনিক সময়ের সমীকরণ পাঠকের কথা চিন্তা করে আগামী ১ আগস্ট থেকে পত্রিকার বর্ধিতমূল্য চালু করবে।