পণ্য নিয়ে আর ছুটতে হবে না সিঙ্গাপুর

সমীকরণ প্রতিবেদন:
গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাবে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরের মাধ্যমে। প্রতি বছর এই আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সামলাতে জাহাজ ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের। এই খরচ সাশ্রয় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে তৈরি হচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর। বন্দরে ইতোমধ্যে একটি চ্যানেল তৈরি করে তাতে ১১৪টি জাহাজ নির্মাণসামগ্রী নিয়ে আসা যাওয়া করেছে। আগামী ২০২৬ সালের ২৬ জানুয়ারি এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ মিলিয়ন (এক মিলিয়ন সমান ১০ লাখ) টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ২ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। এতে বার্ষিক আয় হবে ১২ শ’ থেকে ১৫ শ’ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, সোনাদিয়া ও পায়রার পর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আলোচনা শুরু হয়। মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য নির্মাণ করা হয় জেটি। গত ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথম বৃহদাকারের বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ভেনাস ট্রায়াস পণ্য নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আসে। দেখা যায়, গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য যে গভীরতা দরকার তার সবকিছু এখানে আছে এবং সহজেই জাহাজ ভিড়ছে একের পর এক। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিগুলোতে সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং করার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়ে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্তের কথা সরকারকে জানায়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সার্বিক বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলের মতামত জানতে চাইলে এখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত মেলে। বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে গিয়ে যে পরিমাণ ড্রেজিং করতে হয়েছে তাতে সহজেই ১৪ থেকে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহাজাহান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরটি ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমদানি-রফতানি কেন্দ্রে পরিণত হবে। স্বপ্নের গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি প্রতিবেশী দেশের বন্দরগুলোর মধ্যে মাদার ভেসেলের জন্য এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিডার পোর্টের খ্যাতি অর্জন করবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে সাধারণত মাত্র ৯.৫ মিটার ড্রাফটবিশিষ্ট জাহাজ বার্থ করতে পারে। তবে সম্প্রতি ১০ মিটার ড্রাফটের একটি জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে। কিন্তু এসব জাহাজ ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪০০ টিইইউএস কনটেইনার বহন করতে পারে। একটি মাদার ভেসেলের ধারণক্ষমতা আট হাজার থেকে ১০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে আট হাজার টিইইউএসের বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন কনটেইনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে। সহজেই আসতে পারবে বৃহদাকার কনটেইনার জাহাজ। এখান থেকে পণ্য নিয়ে আর ছুটতে হবে না সিঙ্গাপুর, কলম্বো আর মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দৃশ্যমান হয়ে গেছে। ২০২৬ সালে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। এ লক্ষ্যে আগামী জুলাই নাগাদ জেটি ও কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণকাজ শুরু হবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ, এখনকার স্মার্ট দেশ সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়াও অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে দুই হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পাশে ৩৭০ মিটার দীর্ঘ (ব্রেক ওয়াটার) ঢেউ নিরোধক বাঁধ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার জেটি ও ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ এবং কনটেইনার ইয়ার্ডসহ সব বন্দর সুবিধা নির্মাণের জন্য তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।