নৌকা ২ ধানের শীষ ১
- আপলোড টাইম : ০৯:৩৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই ২০১৮
- / ৪০১ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রির্পোট: রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও সিলেটে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজশাহী সিটির ১৩৮ কেন্দ্রের বেসরকারী ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৪। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোট পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৪৯২ ভোট। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৮৭ হাজার ৯০২ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
অপর দিকে বরিশাল সিটিতে ১২৩ কেন্দ্রের মধ্যে ১০৭ কেন্দ্রের ফলে আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহ ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৩। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪১। এই সিটিতে ১৫টি ভোট কেন্দ্র স্থগিত এবং একটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। তবে দুই প্রধান প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান স্থগিত দুটি কেন্দ্রের ভোটের চেয়ে কম হওয়ায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ফল ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ১৩৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২ কেন্দ্রে ফলে ৯০ হাজার ৫৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। অপর দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন কামরান ভোট পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। দুটি কেন্দ্রে স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত কেন্দ্রে মোট ভোট রয়েছেন ৪ হাজার ৭৮৭ ভোট। অপর দিকে বিজয়ী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান রয়েছে ৪ হাজার ৭২৪ ভোট।
ভোট পুনর্গণনা দাবি কামরানের: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ফল ঘোষণার মধ্যে ভোট পুনর্গণনার দাবি উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দীন আহমদ কামরানের পক্ষ থেকে। সোমবার দিনভর ভোটগ্রহণের পর নগরীর উপশহরে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান। এসময় সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে ভোট পুনর্গণনার দাবি তোলেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তারা যে ফলাফল পেয়েছেন, তা রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফলাফলের সঙ্গে মিলছে না।
সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত, ভোট পুনর্গণনা এবং কয়েকটি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট নেয়ার জন্য বলেছি। কারণ এখানে যে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে কেন্দ্রে আমাদের পোলিং এজেন্টদের দেয়া ফলাফলের সঙ্গে মিলছে না।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্টকে বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন তিনি। এরপর থেকে ফল ঘোষণা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক ফল ঘোষণার ওই কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিলে তিন সিটিতেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে অনিয়মের অভিযোগে বরিশালে বিএনপি প্রার্থীসহ চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। যেসব কেন্দ্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন কিছু অনিয়ম ছাড়া তিন সিটিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তিনি বলেন, যে কেন্দ্রে অভিযোগ এসেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে। তিন সিটিতে অনিয়মের অভিযোগে মাত্র ১৫ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে তিন সিটিতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ তিন সিটিতে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দাবি ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তিন সিটি নির্বাচনে ভোট নয়, আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন হলো। গাজীপুর ও খুলনায় অল্প কিছু লোক ভোট দিতে পারলেও আজকে তিন সিটিতে সেটিও সম্ভব হয়নি।
গতকাল সোমবার সকাল আটটা থেকে রাজশাহী বরিশাল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ভোটগ্রহণ করা হয়। নির্বাচন শুরুর চার ঘণ্টা পর বেলা বারোটার দিকে বরিশালে বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ারসহ অন্য প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন। এ সময় তিনি নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ করে বলেন, আগের কোন সরকারের আমলেই বরিশালে এমন নির্বাচনের ঘটনা ঘটেনি। খুলনা গাজীপুরে তাও ভোট হয়েছে। কিন্তু বরিশালে কোন নির্বাচনই হয়নি। তিনি সকালেই সব ভোটকেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি, সিপিবি সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থীরাও এই বর্জনের সঙ্গে একমত।
সিইসির ব্রিফিং এদিকে ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কিছু অনিয়ম ছাড়া সার্বিকভাবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। যেসব কেন্দ্রের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত হবে বলে। নির্বাচনে গণমাধ্যম মাধ্যমে কিছু অভিযোগ শুনেছি। আমরা কেবল নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যকে ধরতে পারি। সে হিসাবে ১৫টি কেন্দ্রে অনিয়মের তথ্য এসেছে। এসব কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। বরিশালে মেয়র প্রার্থী ডাঃ মনীষাকে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সার্বিক নিরাপত্তার জন্য। ডাঃ মনীষা মামলা করতে পারেন, আদালতের কাছে যেতে পারেন। অভিযোগ পেলে আমরাও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। রাজশাহীতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর বুলবুল ভোট না দেয়ার বিষয়ে বলেন, সেটা তার ব্যাপার, কিভাবে নিয়েছেন। আমাদের কাছে যে তথ্য তাতে কোন অনিয়ম হয়নি উল্লেখ করেন।