সমীকরণ প্রতিবেদন:
নেপালে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যাত্রী-ক্রুসহ সবাই নিহত হয়েছেন। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারার উদ্দেশে যাওয়ার সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইয়েতি এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র সুদর্শন বরতৌলা। খবর বিবিসি’র। গতকাল রোববার সকালে কাঠমান্ডু থেকে পর্যটন শহর পোখারায় যাচ্ছিল ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ‘৯ এন-এএনসি এটিআর-৭২’ মডেলের বিমানটি। এতে চার ক্রুসহ ৭২ যাত্রী ছিলেন। বিমানটি পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময়ে সেতি নদীর তীরে বিধ্বস্ত হয়।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, বিমান বিধ্বস্তের বিষয়টি প্রথমেই নজরে আসে স্থানীয়দের। প্রাথমিক অবস্থায় সেখানে উদ্ধারকাজ শুরু করেন তারা। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নেপালের ২০০ সেনা সদস্য। এদিকে, এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল। সংশ্লিষ্টদের উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আরও মরদেহ উদ্ধার হবে। বিমানটি ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গেছে।’ বিমানে ৫৩ নেপালের আরোহী ছিলেন। এ ছাড়া পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান এবং দুইজন কোরিয়ান ছিলেন। একজন করে ছিলেন আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের যাত্রী। নেপালে এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় আগুন ধরে যায়। ওই ঘটনায় ৫১ জন নিহত হন। এ ছাড়া গত মে মাসে ‘তারা’ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট বিধ্বস্তে ২২ জন প্রাণ হারান।
অন্যদিকে নেপাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধার অভিযান চলছে। (দুর্ঘটনার সময়) আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল। স্থানীয় টেলিভিশনে দুর্ঘটনাস্থল থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে এবং উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয় লোকজনকে বিমানটির ধ্বংসাবশেষের চারপাশে জড়ো হতেও দেখা যায়। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র সুদর্শন বারতৌলা রয়টার্সকে জানান, তাদের পরিচালিত টুইন-ইঞ্জিন এটিআর ৭২ মডেলের এই বিমানটিতে ৭২ জন আরোহী ছিল। আরোহীদের মধ্যে দু’জন শিশু, চারজন ক্রু এবং ১০ জন বিদেশি নাগরিক ছিলেন। তথ্যমতে, দুর্ঘটনার পর শতাধিক উদ্ধারকর্মী পাহাড়ের ধারের ওই দুর্ঘটনাস্থল হাজির হন। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোরের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির বয়স ১৫ বছর। বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত টুইন ইঞ্জিন টার্বোপ্রপ বিমান এটিআর ৭২ হচ্ছে এয়ারবাস এবং ইতালির লিওনার্দোর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট অনুসারে সংস্থাটির বহরে ছয়টি এটিআর৭২-৫০০ মডেলের বিমান রয়েছে।
রয়টার্স আরও বলছে, নেপালে বিমান দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। কারণ এভারেস্টসহ বিশ্বের ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বতের মধ্যে আটটির অবস্থান এই দেশটিতে এবং এ কারণে আবহাওয়া হঠাৎ পরিবর্তন হতে পারে এবং বিমান চলাচলের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এ ঘটনার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটিতে অন্য যাত্রীদের মধ্যে ৫ ভারতীয়, ৪ রাশিয়ান, ১ আইরিশ এবং ২ জন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ছিলেন। উলেস্নখ্য, দুর্গম পর্বত, বৈরী আবহাওয়া, প্রশিক্ষণ ও রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে দক্ষিণ এশিয়ার পার্বত্য দেশ নেপালে প্রায়শই বিমান দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গত বছরের মে মাসে নেপালের উত্তরাঞ্চলের মুসতাং জেলায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২১ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
