সমীকরণ প্রতিবেদন:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব এখন মাঠ প্রশাসনে চলে গেছে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংশ্লিষ্টরা। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা ছিলেন দৃশ্যত অনেকটাই নির্ভার। তবে অনেকটা অস্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে ইসি সচিবকে। দুপুর ১২টার দিকে সিইসির কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনাররা কিছুটা সময় নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন। এ সময় তারা তপশিল-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। নির্বাচন ভবন ছাড়েন অফিস সময় শেষ হওয়ার আগেই। সিইসি বেলা সোয়া ৩টার সময় অফিস ত্যাগ করেন। এ সময় একজন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, এখন আর স্যারদের তেমন কোনো কাজ নেই। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব চলে গেছে মাঠ প্রশাসনের (রিটার্নিং অফিসার) হাতে।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমও গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে কিছুটা অস্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনাদের জন্য আমার পারিবারিক ও সামাজিক জীবন হুমকির মুখে।’ এসময় সচিবের সঙ্গে সাংবাদিকদের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হলে সিইসির হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন ইসি সচিব। তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচন ভবনের অভ্যন্তরে কর্মকর্তাদের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেলেও ভবনের বাইরে ছিল পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সতর্ক অবস্থান। সিইসির সঙ্গে নিজেদের আলোচনা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তপশিল ঘোষণার পরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আমরা কথা বলেছি। কোনো এজেন্ডা ছিল না।’ তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচনের মূল কাজ চলে গেছে মাঠ প্রশাসনের কাছে। বুধবার তপশিলের প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে গেছে। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ হয়ে গেছে। প্রার্থীদের যোগ্যতা সম্পর্কে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। নিয়ম অনুসারে একের পর এক পরিপত্র যাবে। ইসির পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো নির্দেশনা থাকলে তা দেওয়া হবে।
নির্বাচনে জোটগত অংশ নিতে সময় তিন দিন :
সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিতে চাইলে তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন জানাতে হবে। ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে নির্বাচনি জোট গঠন করা হলে, এ জোটের যে কোনো একটি দলের প্রতীক জোটভুক্ত দলসমূহের প্রার্থীদের বরাদ্দ করা যাবে। এমন প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর দরখাস্ত দাখিলের বিধান রয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচনি জোটের প্রতীকের জন্য তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। তাদের অনেকেই নিজ প্রতীকের পাশাপাশি বিগত নির্বাচনগুলোতে জোটগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছে।
ভোটার প্রতি ১০ টাকা ব্যয় নির্ধারণ :
নির্বাচন কমিশন এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জন্য ভোটার প্রতি ১০টা ব্যয় নির্ধারণ করেছে। তবে কোনো আসনে ভোটার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি থাকলেও ২৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করা যাবে না। রাজনৈতিক দল থেকে দেওয়া খরচও এই ব্যয় সীমার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
ব্যালট পেপার যাবে ভোটের তিন-চার দিন আগে :
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ব্যালট পেপার ছাপানো হবে। আর নির্বাচনের তিন-চার দিন আগে ব্যালট পৌঁছে যাবে জেলা পর্যায়ে। তবে কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানার সিদ্ধান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখনো সচিবালয়কে অবহিত করেনি। নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তপশিল ঘোষণার পর থেকে নিয়োগ ও বদলির বিষয়ে জাহাংগীর আলম বলেন, আরপিওতে সুস্পষ্ট বলা আছে নির্বাচনকালীন সরকারের কোন কোন বিষয়গুলো ইসির পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে। সেখানে বলা আছে—জেলা প্রশাসক, ডিএমপি কমিশনার ও তাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষেত্রে ইসির পূর্ব অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
মেয়র-চেয়ারম্যানরা পদে থেকে সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না :
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানরা পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়রের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস/প্রতিষ্ঠানের বা করপোরেশন অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য পদ্ধতিগতভাবে পদত্যাগ করতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের আবেদন করতে হবে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে :
ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে গতকাল জানানো হয়, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশীয় সংস্থাগুলোকে আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে হবে। পর্যবেক্ষক সংস্থাকে কোন কোন নির্বাচনি এলাকা (সংসদীয় আসনভিত্তিক) বা এলাকাগুলোতে কেন্দ্রীয় বা স্থানীয়ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইচ্ছুক, তা উল্লেখ করে কমিশন সচিবালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করতে হবে।
পোস্টার বিলবোর্ড সরাতে স্থানীয় সরকারকে চিঠি :
তপশিল ঘোষণার আগেই যারা প্রচারণা হিসেবে বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট লাগিয়েছেন সেগুলো স্ব উদ্যোগে সরানোর জন্য স্থানীয় সরকার সচিরের কাছে চিঠি দিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে ইসি সচিব জানান, নির্বাচন আচরণ বিধামালা অনুযায়ী নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময় পর্যন্ত রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচনি পদপ্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করতে হবে। মন্ত্রী-এমপিদের প্রচার নিয়েও আচরণবিধিতে সব বলা রয়েছে জানান তিনি। আগাম প্রচারণা বিষয়ে তিনি জানান, এগুলো আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছি, তারা তাদের মতো করে উদ্যোগ নেবে।