সমীকরণ প্রতিবেদন:
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। চলতি জানুয়ারিতে একজন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং তাকে বাঁচানো যায়নি। ভাইরাসজনিত হলেও কোভিডের চেয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের হার কম কিন্তু মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ২০১১ সালে লালমনিরহাট জেলায় ২২ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং ২১ জনের মৃত্যু হয়। পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি নিপাহর সংক্রমণ হয়ে থাকে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। রোগতত্ত্ব রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, মূলত খেজুরের কাঁচা রস পানে রোগটি বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া কোনো কোনো এলাকায় গাছের নিচে পড়ে থাকা অর্ধ খাওয়া ফল খেলে (বিশেষত বরই) নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে থাকে। পাকা বরই বাদুর খেয়ে অর্ধেক ফেলে দেয় এবং শিশুরাই বেশি এই অর্ধ খাওয়া ফল খেয়ে থাকে। এই অর্ধ খাওয়া ফল ও খেজুরের কাঁচা রস পান না করতে আহ্বান জানিয়েছে আইইডিসিআর। গতকাল বুধবার মহাখালীর আইইডিসিআর কার্যালয়ে ‘শীতকালীন সংক্রামক রোগ ও নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ’ শীর্ষক সেমিনারে আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন এই আহ্বান জানান। সেমিনারে নিপাহ ছাড়াও শীতকালীন অন্যান্য ভাইরাস এবং এদের সংক্রমণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেমিনারে আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বক্তব্য রাখেন। বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন ড. মঞ্জুর হোসেইন খান ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. শারমিন সুলতানা। এতে বলা হয়, ২০২২ সালেও দেশে তিনজন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন সুস্থ হয়েছেন। উভয়েই নওগাঁওর বাসিন্দা এবং দুইজনই নারী। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের একমাত্র বাহক বাদুর। বাদুর রাতে খেঁজুর গাছে বসে রস পান করে এবং একই সাথে রসে প্রস্রাব করে দেয়। বাদুরের লালাতে ও প্রস্রাবে নিপাহ ভাইরাস থাকে বলে গাছে বাঁধা হাড়িতে নিপাহ ভাইরাস মিশে যায়। অনেকের সকাল বেলা তাজা খেজুর রস পানের অভ্যাস রয়েছে। খেজুরের তাজা রস পানে অনেকেই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আইইডিসিআর’র কর্মকর্তা জানান, খেজুরের কাঁচা রস নয়, এটা পান করতে হবে গরম করে। কারণ গরমে ভাইরাস মরে যায়। নিপাহ ভাইরাস সবচেয়ে প্রাণঘাতী, এতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়ে থাকে। চলতি জানুয়ারিতে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণে যিনি আক্রান্ত হন তিনি একজন নারী। অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কিন্তু শেষ দিকে হওয়ায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে জানান আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন। অনুষ্ঠানে চলতি শীতে রোটা ভাইরাস নিয়েও আলোচনা হয়, যা থেকে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া এই সময়ে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়ে থাকে মুরগি ও পাখিদের মধ্যে। নিউমোনিয়া হয়ে থাকে শিশুদের, সব বয়সীর মধ্যে কমন কোল্ড হয়ে থাকে রাইনু ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে।
