দর্শনা রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনে কেটে মাদ্রাসাছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক/দর্শনা অফিস:
দর্শনা হঠাৎপাড়া রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনে কেটে গনি ইয়ামিন (১৪) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। হঠাৎপাড়া জামে মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে সাইকেলযোগে নিজ বাড়ি বড় দুতপাতিলা গ্রামে খাবার খাওয়ার জন্য রওনা দিলে পথের মধ্যে হঠাৎপাড়া রেল ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় ইয়ামিনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইয়ামিনকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত গনি ইয়ামিন দামুড়হুদা উপজেলার হাউলি ইউনিয়নের বড়দুধপাতিলা গ্রামের পূর্বপাড়ার আশরাফুল ইসলামের ছেলে ও দর্শনা আনোয়ারপুর (হঠাৎপাড়া) হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র।
প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে হঠাৎপাড়া জামে মসজিদে নামাজ পড়ে নিজ গ্রাম দামুড়হুদা উপজেলার হাউলি ইউনিয়নের বড় দুতপাতিলা গ্রামে বাইসাইকেলযোগে বাড়িতে খাবার খেতে যাচ্ছিল ইয়ামিন। পথের মধ্যে দর্শনা হঠাৎপাড়া রেল ক্রসিংয়ে পৌঁছালে ট্রেনলাইনের মধ্যে সাইকেল নিয়ে পড়ে যায়। এসময় দ্রুতগতিতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা পার্বতীপুরগামী রকেট ট্রেন তাকে ধাক্কা দেয়। ট্রেনের চাকায় তাঁর বাম পা কোমর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পার্শবর্তী স্থানে সিটকে পড়ে। এমসয় স্থানীয় ব্যক্তিরা ছেলেটিকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ইয়ামিনকে মৃত ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে নিহত ইয়ামিন আলীর চাচাতো ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ছয় ভাই বোনের মধ্যে ইয়ামিন সকলের আদরের। গতকাল দুপুরের দিকে ঘটনাস্থল এলাকার এক ভাই আমাকে মোবাইলে জানায় ইয়ামিন ট্রেনে কাটা পড়েছে। আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নামাজ পড়ে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য গ্রামে আসছিল। কিন্তু বাড়িতে আর পৌঁছাতে পারল না ইয়ামিন।’
এবিষয়ে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে ইয়ামিনকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তাঁর একটি পা কোমর থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। জরুরি বিভাগে আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ইয়ামিনের মৃত্যু হয়েছে।
এবিষয়ে দর্শনা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিক উদ্দিন জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঊর্ধ্বমুখী রকেট মেইল ট্রেনটি পার্বতীপুর যাওয়ার পথে দর্শনা হঠাৎ পাড়া আনোয়ারপুর নামক স্থানে ট্রেনে কেটে ওই মাদ্রাসাছাত্র নিহত হন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে গতকালই সন্ধ্যার দিকে ইয়ামিনের লাশ বড়দুতপাতিলা গ্রামে নিয়ে আসলে শতশত নারী-পুরুষ তাঁর লাশ দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায়। পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। বাদ এশা তার লাশের জানাজা শেষে বেদনাবিধুর পরিবেশে গ্রামের কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনা প্রবণত দর্শনা হঠাৎপাড়া রেল ক্রসিংটি ব্রিটিশ আমল থেকে অরক্ষিত। এই স্থানে প্রায়ই মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা ঘটে। দর্শনা থেকে দামুড়হুদা উপজেলার হাউলি ইউনিয়নের বড় দুতপাতিলা ও ছোট দুতপাতিলা গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র সহজ রাস্তা হঠাৎপাড়া রেল ক্রসিং হয়ে। রেল লাইনের বাকা মোড় স্থানে এই ক্রসিং পয়েন্ট হওয়ায় অনেক সময় দেখতে না পেয়ে পাখিভ্যান, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, মাইক্রো, ট্রাকসহ ছোট-বড় সকল প্রকার যানবহন এই হঠাৎপাড়া রেললাইন ক্রসিং করে জীবনের ভয় নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করে থাকে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার মাথা ব্যথা নেয় বলে অভিযোগ করে এলাকাবাসী।
