নানা অব্যবস্থাপনায় আলমডাঙ্গা পৌর শহরে দুর্ভোগ
ফুটপাত দখল ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং হলেও নেই কোনো পদক্ষেপ
- আপলোড টাইম : ০৯:২৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
- / ৮২ বার পড়া হয়েছে
আলমডাঙ্গা পৌর শহর যেন এখন দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে। পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যত্রতত্র নোংরা-আবর্জনা ফেলা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ফুটপাত দখল, মোড়ে মোড়ে যত্রতত্র পার্কিং, অস্থায়ী দোকান, মালামালের ট্রাক লোড-আনলোডসহ সব মিলে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন শহরবাসী। এছাড়া শহরের জলবদ্ধতা দূরীকরণে প্রধান সড়কের দুইপাশে ড্রেন তৈরি করা হলেও মূল সড়ক থেকে উঁচু-নিচু। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দুর্বল হবার কারণে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাচ্ছে না পৌরবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রধান সড়কের স্বাধীনতা স্তম্ভ মোড় থেকে চারতলা (স্বর্ণ পট্টি) পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানের মালামালে ঠাশা। ফুটপাতের ওপরে চলছে বিভিন্ন রেস্তোরাঁর রান্না-বান্না ও বিভিন্ন মোটর ওয়ার্কশপের কার্যক্রমও। এছাড়াও বেশ কয়েকটি খাবারের ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ ফুটপাতের ওপর ঠাই পেয়েছে আসবাবপত্রের দোকান। স্থায়ীভাবে বিভিন্ন মালামাল রাখায় হারিয়েছে ফুটপাতের অস্তিত্ব।
মূল সড়কেই যত্রতত্র পার্কিং করা হয় মোটরসাইকেল, পাখিভ্যানসহ বিভিন্ন দোকানের পণ্য ডেলিভারি ভ্যান। সড়কের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে ট্রাক দাঁড় করিয়ে পণ্য আনলোড করায় পোস্ট অফিসের সামনে থেকে শুরু করে চারতলা মোড়, হাফিজ মোড়, আলিফ উদ্দিন রোড, কাপড়পট্টি, তহবাজার, মাছ-মাংশের বাজারসহ প্রায় সব স্থানেই সারাদিন যানজট লেগে থাকে। এসময় পায়ে হাঁটার জায়গাও না থাকায় চলাচল অত্যান্ত দূরুহ হয়ে পড়ে। প্রধান সড়কের বড় মসজিদের সামনের অংশ অতিক্রম করতে পথচারীদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা।
গতকাল সোমবার কথা হয় স্কুলগামী এক শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, রেস্তোরাঁর সামনে ছোট বাঁচ্চাকে নিয়ে আতংকে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। সবসময় ভয়ে থাকি কখন চুলার তেল কিংবা আগুনে ছিটে গায়ে পড়ে। সড়কের এই যানজট নিরসনে ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ রাস্তার ওপর পণ্যবাহী যান থামিয়ে রাখা বন্ধ করা জরুরি।
অন্যদিকে, শহরজুড়ে রাস্তাঘাটে ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যানের দৌড়াত্ম বেড়েছে। যার অধিকাংশ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসে। পৌরসভার নিবন্ধন, নির্দিষ্ট স্যান্ড না থাকার কারণে যেখানে সেখানে পার্কিং করে রাখা যানজট সৃষ্টির অন্যতম একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ পথচারীদের দুর্ভোগ লাঘবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় সুধিজনেরা মন্তব্য করলেও দায়িত্বশীলদের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। অদ্যবধি পৌরসভা, প্রশাসন, ব্যবসায়ী সমিতি জনগনের দুর্ভোগ লাঘবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি অভিযোগ করেন পথচারীরা।
স্থানীয় ও পথচারীরা বলেন, কোনো বাজেটের সমস্য নয়, সামান্য আন্তরিকতা থাকলেই এই পরিবেশ থেকে মুক্ত হতে পারে শহরবাসী। ফুটপাতের অবৈধ দখলমুক্ত, অবৈধ পার্কিং অপসারণ, দিনের বেলা বড় পরিবহন শহরের মধ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আর ব্যাটারি চালিত পাখিভ্যান যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করা গেলেই অনেকাংশে যানজট থেকে মুক্তি পাবে শহরবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, শহরের প্রধান সড়কে যে জ্যাম লেগে থাকে, তাতে নানা সময় মানুষ মার্কেটে প্রবেশ করতে পারে না। এতে ব্যবসার ওপরেও প্রভাব পড়ছে। যানজটের কারণে ক্রেতারা আলমডাঙ্গা শহরে না এসে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, যানজটে আটকে অনেক সময় মুমূর্ষু রোগী নিয়ে জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আলমডাঙ্গা শহরে যে পরিমাণ পাখিভ্যান রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তাতেই রাস্তার জায়গা শেষ হয়ে যায়। এর ওপর আবার দিনে-দুপুরেই রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে মালবাহী গাড়ি লোড-আনলোড হলেও দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, বিষয়টি সমাধানে পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি শহরের সকল ব্যবসায়ী সমিতির প্রধানদের নিয়ে বসবেন। আমি নিজেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবসায়ী সমিতির প্রধানদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু বলেন, ‘শহরের যানজট একটি মূখ্য সমস্যা হয়ে উঠেছে। আমাকেও বিভিন্ন সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। বিষয়টি সমাধানে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারসহ একটি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা যানজটের প্রধান কারণ ও নিরসনের উপায় খুঁজে বের করে রিপোর্ট জমা দেবে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে শহরের যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা নিতে পারব বলে আশা করছি। এছাড়াও আলমডাঙ্গা পুরাতন সাদা ব্রিজ থেকে হাউসপুর ব্রিজ পর্যন্ত জিকে সেচ প্রকল্পের পাশ দিয়ে একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণকাজ চলমান আছে। সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হলে যানজট থেকে কিছুটা নিরসন পাওয়া যাবে।’