নমুনা পরীক্ষার সরঞ্জাম সংকট

করোনা মোকাবেলায় কারও গাফিলতি কাম্য নয়
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সাফল্য পেতে নমুনা পরীক্ষায় গতি বাড়ানোর বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ল্যাবরেটরিগুলোতে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম রাখা জরুরি। উদ্বেগের বিষয় হল, সরকারি বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে এসব সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে ব্যাহত হতে পারে করোনা পরীক্ষা, আর তাতে রোগটির সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর (সিএমএসডি) উদ্দেশে প্রেরিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক চিঠিতে নমুনা পরীক্ষার সরঞ্জাম সংকটের বিষয়টি জানা যায়। এতে বলা হয়েছে, সরকারি সহায়তায় পরিচালিত আরটি-পিসিআর ল্যাবগুলোতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম (কনজিউমার গুডস) প্রয়োজন। চিঠিতে কয়েকটি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেসব স্থানে সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহ করা প্রয়োজন। এতে বোঝা যায়, করোনার নমুনা পরীক্ষার সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার পরীক্ষা করার মতো ব্যবহার্য সামগ্রী নিশ্চিত করার নির্দেশনা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের। তারপরও কেন সরঞ্জামের সংকট দেখা দিল তা বোধগম্য নয়। এ ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি থেকে থাকলে তার জবাবদিহি হওয়া উচিত। বস্তুত এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও দেশের স্বাস্থ্য খাতের করুণ চিত্রটি বেরিয়ে এসেছে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার স্বার্থে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি। এজন্য এ খাতের কেনাকাটাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুসমন্বয় প্রয়োজন। করোনা মোকাবেলায় দ্রুত সাফল্য পেতে ব্যাপকভিত্তিক নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা রোগীদের শনাক্ত করার বিকল্প নেই। অথচ দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার গতি অত্যন্ত মন্থর। অবিলম্বে সরঞ্জাম সংকট কাটিয়ে ওঠা না গেলে নমুনা পরীক্ষার গতি আরও মন্থর হয়ে পড়বে। এখানে আরও একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। দেশে যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা চলছে, অর্থাৎ আরটি-পিসিআর পদ্ধতি, তাতে করোনা মোকাবেলায় দ্রুত সাফল্য অর্জন করা কঠিন। ফলে বর্তমানে কেবল তারাই পরীক্ষা করাতে আসছেন, যাদের করোনা উপসর্গ রয়েছে। যাদের উপসর্গ নেই, তারা খুব কমই পরীক্ষা করান। বস্তুত আরটি-পিসিআর পরীক্ষা অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ব্যয়বহুল। এর মাধ্যমে একটি নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে ১০০ টাকার বেশি ব্যয় হয়। এছাড়া প্রতি নমুনায় কিট ও রি-এজেন্টসহ আরও ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়। তাছাড়া আরটি-পিসিআর পরীক্ষা শেষ করতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। অন্যদিকে স্বল্প ব্যয়ের অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষার ফল পাওয়া যায় মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটে। এটি উচ্চমাত্রায় সংবেদনশীল। তাছাড়া সাধারণ নমুনা পরীক্ষাগারেই এ পরীক্ষা করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য খুব বেশি প্রযুক্তি জ্ঞানেরও প্রয়োজন হয় না। এ বাস্তবতায় দেশে অবিলম্বে অ্যান্টিজেনভিত্তিক র‌্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট শুরু করা উচিত। বিশ্বের অনেক দেশে, এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতেও এ পদ্ধতির পরীক্ষা বহুল প্রচলিত। আমরা এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে পারি না। বস্তুত অনেক আগেই আমাদের এ পদ্ধতিতে যাওয়া উচিত ছিল। আমরা আশা করব, করোনার নমুনা পরীক্ষার সরঞ্জাম দ্রুত সংগ্রহের পাশাপাশি সরকার দেশব্যাপী অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষা শুরু করারও উদ্যোগ নেবে।