নতুন রাজনৈতিক দল : নিবন্ধন শর্ত সহজে নমনীয় ইসি

সমীকরণ প্রতিবেদন:
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শর্ত নিয়ে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন, ২০২০-এর খসড়া থেকে কঠোর শর্ত তুলে নেয়ার বিষয়ে নীতিগত একমত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)-সহ চার কমিশনার। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাওয়ার তিনটি শর্তের দুটিই বাদ দেয়া হচ্ছে। শুধু সাংগঠনিক কাঠামোগত শর্ত রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার সময়সীমা ১০ বছর বাড়িয়ে ২০৩০ সাল করা হচ্ছে। গতকাল রোববার সিইসি কেএম নূরুল হুদার কার্যালয়ে কমিশনারদের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে নীতিগতভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, এদিন সিইসি কার্যালয়ে শুধু কমিশনারদের নিয়ে এ অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিইসি ও তিনজন নির্বাচন কমিশনার অংশ নেন। রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও রাখা হয়নি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও অংশ নেননি। ২৬ আগস্ট এ খসড়া আইনের বিরোধিতা করে সিইসির কাছে নোট অব ডিসেন্ট দেন তিনি। এতে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর ‘চ্যাপ্টার সিক্স এ’-এর বিভিন্ন আর্টিক্যাল কর্তন করে রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ প্রণয়নের সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আরপিও বা ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর অংশবিশেষ নিয়ে পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন হটকারী সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শর্ত সহজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা খসড়া আইনের কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। নতুন দল নিবন্ধন শর্ত বেঁধে দেয়া ও রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিতে সময়সীমা বেঁধে দেয়ার বিষয়ে কথা বলেছি, ডিবেট করেছি। তবে এখনই তা চূড়ান্ত বলা যাবে না। তিনি বলেন, আইন পাস করবে সংসদ। আমরা প্রস্তাবনা পাঠাব।
নির্বাচন কমিশনের আইন সংস্কার কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আমরা কিছু বিষয়ে নীতিগত একমত হয়েছি-এটা বলা যেতে পারে। তবে কমিশনের একটি সভা ডেকে সেখানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-এর সংশোধনী ও রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়ে খসড়া আইন ও বিদ্যমান আইনে যেসব শর্ত রয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক নয়। তাই কিছু শর্ত বাদ দেয়া হচ্ছে। সাংগঠনিক কাঠামো সংক্রান্ত শর্ত রাখা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিষয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। জানা গেছে, আরপিওর ৯০ ধারায় রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ওই ধারাটি আরপিও থেকে বের করে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন’ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতোমধ্যে কমিশনের সভায় এ আইনটি প্রয়োজনীয় সংশোধন সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়। রোববার ওইসব সংশোধনী নিয়ে বৈঠক করলেন নির্বাচন কমিশনাররা। বৈঠকে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে খসড়া আইনের ৪(১)(ক) ধারায় দুটি শর্ত শিথিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিদ্যমান একটি শর্ত বহাল রাখা হয়। নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য রাজনৈতিক দলের দরখাস্ত করার আগের দুই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ ও কমপক্ষে একটি আসন প্রাপ্তির শর্ত এবং অংশগ্রহণকৃত আসনের মোট ভোটের ৫ ভাগ ভোট পাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত তুলে দেয়ার বিষয়ে একমত হন কমিশনাররা। তবে ২১ জেলা ও ন্যূনতম একশ’ উপজেলায় সক্রিয় দলীয় কার্যালয় থাকার শর্ত বহাল রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে আরপিওতে সংশোধনী এনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময় যে কোনো দুটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ ও একটি আসনে জয়লাভ অথবা ৫ শতাংশ ভোট পাওয়ার শর্ত দেয়া হয়। বর্তমান কেএম নূরুল হুদার কমিশন ওই শর্তে আরও কঠোরতা এনে আবেদনের আগের দুটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত দেয়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন। বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, একাধিক কমিশনার মনে করেন, এসব শর্ত মেনে কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাবে না। আর ২০০৮ সালে আরপিও সংশোধনের পর ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যতগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে সেসব নির্বাচনে অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের সুযোগও ছিল না। তবে কোনো কোনো কমিশনার মনে করেন, শুধু সাংগঠনিক কার্যালয় বিবেচনায় নিয়ে নিবন্ধন দেয়া হলে অনেক ভুঁইফোঁড় দলও নিবন্ধন পেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আবারও বৈঠক করা প্রয়োজন।
নারী নেতৃত্বের সময় ২০৩০ সাল :
জানা গেছে, প্রস্তাবিত খসড়া আইনে রাজনৈতিক দলের প্রতিটি কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখার সময়সীমা উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। রোববারের বৈঠকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়ার বিষয়ে নীতিগত একমত হয়েছেন নির্বাচন কমিশনাররা। বিদ্যমান আরপিওতে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলই তা পূরণ করতে পারেনি।