সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে একদফা আন্দোলনের প্রস্তুতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : কূটনৈতিক তৎপরতায় দৌঁড়ঝাপ বিএনপির

সমীকরণ প্রতিবেদন:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি আদায়ে আন্দোলন ও কূটনীতি এই দুটিকেই সমান গুরুত্ব নিচ্ছে বিএনপি চলমান আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের আস্থায় নিতে কাজ করছে দলটির নেতারা। তাই আন্দোলনের সঙ্গে কূটনৈতিকদের মাধ্যমেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামীতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি।

জানা গেছে, আগামীতে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গ্যাস-বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। এই ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিরামহীনভাবে পদযাত্রা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে তারা চূড়ান্ত একদফার আন্দোলনে যাবেন। একদফার আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে উপযুক্ত সময়ে একদফার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনোভাবেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। দলটি তাদের এমন অবস্থান জানিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে আন্দোলনে রয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে আসছে। বিএনপির এই যুগপৎ আন্দোলনে ৭ দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরাম, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), ১২ দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ কয়েকটি সংগঠন যোগ দিয়েছে অভিন্ন লক্ষ্যে এসব দল যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্য বিএনপি সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গ্যাস-বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। এই ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিরামহীনভাবে পদযাত্রা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে তারা চূড়ান্ত একদফার আন্দোলনে যাবেন। একদফার আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে একদফার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জানা গেছে, একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আসন্ন রমজানেও রাজপথের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। রমজানে ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে ঈদের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, মানুষের ভোটের অধিকার আদায় ও গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। দেশের মানুষ আর- এই সরকারকে বিশ্বাস করে না। তারা ভোটের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন চায়। সেজন্য আগামীতে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। আমরা সেই দাবি আদায়ে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের এই আন্দোলন সফল হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে। ১০ দফা দাবি আদায়ে যে ধরনের কর্মসূচির প্রয়োজন হবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে চলমান আন্দোলন কর্মসূচির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে বিএনপি। দলটির কূটনৈতিক উইংয়ের নেতারা নিয়মিত ধারাবাহিকভাবে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে নিজেদের দলীয় অবস্থান কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরছেন। বিএনপির একাধিক নীতি নির্ধারক জানান, আগামীতে একটি গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে নির্দলীয় সরকারের কোনো বিকল্প নেই। নির্দলীয় সরকার ছাড়া এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এসব বিষয় কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে। বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও আগামীতে বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় তৎপর রয়েছে।

জানা গেছে, কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিচ্ছে বিএনপি। দলটি মনে করে, আগামীতে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অতীতের নানা তিক্ততা ভুলে ভারতের সাথে নতুন করে সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার আমন্ত্রণে এক নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার বাসভবনে ওই নৈশভোজে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ অংশ নেন। রাত সাড়ে ৭টা থেকে বিএনপি নেতারা কয়েকঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন। জানা গেছে, নৈশভোজে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতারা আগামী জাতীয় নির্বাচন, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত-অবস্থান তুলে ধরেছেন।

এরআগে সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও ওই বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। গুলশানের এবি টাওয়ারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, নেদারল্যান্ড, স্পেন, ডেনমার্ক ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নিবিড়ভাবে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশে আইনের শাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা সেটা নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, সেটা পরিষ্কার করা হয়েছে বৈঠকে।