লকডাউনেও চায়ের দোকান খোলায় প্রশাসনের বাঁধা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘চা বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। গত ১৯ দিন দোকান বন্ধ। কোথাও হাত পাততেও পারছি না। আর না পেরে সকাল বেলা দোকানটা একটু খুলে ছিলাম। যদি যৎসামান্য আয় হয়, তা দিয়ে পরিবারের সবাইকে খাওয়াতে পারব। হঠাৎ ম্যাজিস্ট্রেট এসে দোকানের কাপগুলো সব ভেঙে দিল।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন চুয়াডাঙ্গা শহরের কলেজ রোডের সাহিত্য পরিষদের সামনের চা-বিক্রেতা শাহাজাহান। একদিকে যেমন দোকান বন্ধের নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে পেটের দায়। কথায় আছে, ‘পেটে দিলে পিঠে সয়’। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সবকিছু বন্ধ থাকায় এমন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা সমাধানে এখনই নেওয়া উচিত কার্যকর পদক্ষেপ।
চুয়াডাঙ্গা কোর্ট রোডের চা-দোকানি ফরজ বলেন, ‘কিছুই করার নেই। আমরা দিন আনি দিন খায়। একদিন দোকান বন্ধ থাকলে পরের দিন সংসার চালানো মুশকিল। ছেয়ে-মেয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে দোকান না খুলে কি করব। আমরাও সরকারি নির্দেশনা মানতে চাই, অথচ পেট বাধ্য করছে দোকান খুলতে। ১৮-১৯ দিন বন্ধ রাখার পর ভোরের দিকে অনেকটা গোপনেই দোকান খুলেছিলাম। কিন্তু কাপগুলো হারালাম। কাপ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’
চা-দোকানি ফরজ যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন তাঁর মধ্যে নিরুপায় হওয়ার প্রতিচ্ছবি ছিল স্পষ্ট। এদিকে, সচেতন মহলের দাবি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দোকানগুলো বন্ধ রাখতে হবে। তবে সেই দোকানিগুলোর পরিবারগুলোর জীবনযাপনের বিষয়টাও ভাবতে হবে। তাঁরা চা বিক্রি করে সংসার চালায়, তবু কারো কাছে হাত পাতেন না। এখন তাঁদের পাশেও দাঁড়াতে হবে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিমধ্যে ৫০ হাজার ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। চায়ের দোকানিরা যদি তালিকা করে দেয়, তবে আমরা সবাইকে সহযোগিতা করব। পর্যাপ্ত ত্রাণ আমাদের কাছে মজুদ আছে। তবে চায়ের দোকান খোলা যাবে না। তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। সরকারের সব সিদ্ধান্ত মানতে হবে।’
এদিকে, সমাজ সচেতন মানুষ দাবি জানিয়েছেন, যেহেতু চায়ের দোকানিদের নির্দিষ্ট কোনো সংগঠন নেই। তাই প্রশাসনের পক্ষ হতে তালিকা করে লকডাউনকে ফলপ্রসূ করতে এখনি তাঁদের সহযোগিতার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
