আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ায় খিতীশ মজুমদারের রেখে যাওয়া প্রায়
আলমডাঙ্গা অফিস:
আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ায় খিতীশ মজুমদারের রেখে যাওয়া প্রায় দেড় শ বিঘা জমি নিয়ে আবার দুইপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে ছত্রপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা আহতদেরকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা হারদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। আহতরা হলেন ছত্রপাড়া গ্রামের মৃত আইন উদ্দীনের ছেলে সদর উদ্দীন, একই এলাকার রফি উদ্দীনের ছেলে সমীর উদ্দীন, নুর ইসলামের ছেলে সেলিম ও ইউসুফ মালিথার ছেলে ইমাজ উদ্দীন। ছত্রপাড়ার মধু মেম্বার লোকজন নিয়ে বিবাদমান জমিতে তার চাষ করা কচু তুলতে গেলে প্রতিপক্ষ লাল খাঁ গ্রুপ ফালা, থ্রোকচ, রামদা ও তলোয়ার নিয়ে হামলা করে। এতে ৪ জনকে রক্তাক্ত জখম হয়।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ায় ১৫০ বিঘা অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে গ্রামে দ্বন্দ্ব রয়েছে। একপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ জোয়ার্দ্দার ও অন্যপক্ষে বর্তমানে নেতৃত্বে আছেন ছত্রপাড়া গ্রামের লাল খাঁ। লাল খাঁ গ্রুপের মধু মেম্বার তার দখলে থাকা জমিতে কচুর আবাদ করেছিল। বর্তমানে ওই কচু মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার সময় হয়েছে। কচু তুলতে মধু মেম্বার কৌশলের আশ্রয় নেয়। সে গত ৪ দিন আগে লাল খাঁ গ্রুপ থেকে শরিফ জোয়ার্দ্দার গ্রুপে যোগ দেয়। বিষয়টি লাল খাঁ গ্রুপ ভালভাবে নিতে পারেনি। তারা শর্ত দেয় যে, মধু মেম্বার নিজেরা ওই ক্ষেতের কচু তুলবে। শরিফ জোয়ার্দ্দারের কোনো লোক তারা ওই সম্পত্তিতে দেখতে চাই না। কিন্তু গতকাল মধু মেম্বার শর্ত ভংগ করে শরিফ জোয়ার্দ্দার পক্ষের ১২-১৩ জন লোক নিয়ে কচু তুলতে যায়। সংবাদ পেয়ে প্রতিপক্ষ লাল খাঁ গ্রুপের গঞ্জের আলীর ছেলে ইলিয়াস, শমসের আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর, মনির উদ্দীনের ছেলে লাল্টু ও মিন্টুসহ বেশ কিছু ব্যক্তি তাদের উপর চড়াও হয়। এই বিবাদে শরিফ জোয়ার্দ্দারের পক্ষের ৪ জন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। এ ব্যাপারে শরিফ জোয়ার্দ্দার পক্ষ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রতিপক্ষ গ্রুপের লাল খাঁর সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘তারা কোনো অভিযোগ করবেন না। তিনি বলেন, প্রায় ২০ বিঘা জমি মধুসহ তাদের পক্ষের লোকজন আবাদ করে। বাকী সব জমি শরিফুল জোয়ার্দ্দারের লোকজন দখলে রেখেছে। তাদের ২০ বিঘা জমিতে মধুসহ অন্যান্য কয়েকজন কচু আবাদ করেছে। হঠাৎ করে মধু আমাদের জব্দ করতে প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে তাদেরকে নিয়ে আমাদের পক্ষের সব জমির কচু তুলে নিতে গেলে আমাদের খেতচাষিরা বাঁধা দেয়। এ সময় মারামারি হয়েছে। আমাদের পক্ষের মানুষও আহত হয়েছে।’
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনায় সঙ্গে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়া গ্রামের ধনাঢ্য খিতীশ মজুমদার ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে বাড়িঘর-সহায় সম্পত্তি রেখে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে তাঁর রেখে যাওয়া ১৫০ বিঘা জমি অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এই বিরাট সম্পত্তির লোভে ছত্রপাড়া ও অভয়নগর নামের এই দুটি গ্রামের মানুষ দখলের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। সম্পত্তি দখলের জন্য পরস্পর গ্রুপের মধ্যে বার বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এমনকি এনিয়ে প্রাণও গেছে কয়েকজনের।