সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ পানি পান করছে বলে জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন। আন্তর্জাতিক নিরাপদ পানি দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ‘বিশুদ্ধ পানির সংস্থান : আনবে নিরাপদ জীবন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জল পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও নগর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক। উদ্বোধন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রফেসর ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী। প্রধান আলোচক ছিলেন, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার। বিশেষ অতিথি ছিলেনÑ বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: আনোয়ার হোসেন, প্রত্যাশার বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাতৃভূমি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম মাইন উদ্দিন মিয়া, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল, বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার শাহেদ শফিক, সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ ইসলাম, নাট্যব্যক্তিত্ব আবীর বাঙ্গালী প্রমুখ। সবুজ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা উদয় খানের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বাপ্পি সরদার বলেন, প্রতি বছর এ দিনে সারা পৃথিবীতে নিরাপদ পানি দিবস পালন করা হয়। সর্বপ্রথম ব্রাজিলে ১৯৯০ সালে ২২ মার্চ নিরাপদ পানি দিবস পালন করা হয়েছিল। তবে ১৯৯৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরাপদ পানি দিবস পালন করা হচ্ছে। এশিয়া অঞ্চলে সব থেকে নিরাপদ পানি ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে ভূগর্ভের পানি কমে গেছে এবং লবণাক্ত পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের তথ্য ও গবেষণা পরিষদ বিগত আট মাস সিটি করপোরেশন এলাকা এবং দেশের ২১টি জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা ও সুপেয় পানি ব্যবহারের মাত্রা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে। দেখা গেছে, শহরের অধিকাংশ এলাকায় বিশেষ করে সিটি করপোরেশনে বসবাসরত শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ অনিরাপদ পানি পান করছেন। ঢাকা সিটির ওয়াসার পানিতে আয়রন, ক্যাডমিয়াম, মিনি প্লাস্টিক, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা দেখা গেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের শতকরা ৭৭ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ পানি পান করার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁঁকিতে পড়েছে। উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীরা কম পানি পান করায় স্বাস্থ্যঝুঁঁকি বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, নারীদের ক্ষেত্রে জরায়ু ক্যান্সার ও বন্ধ্যত্ব রোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
বাপ্পি সরদার আরো বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের শতকরা ৮০ শতাংশ জনগণ পুকুরের পানির ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্রের পানি ফসলি জমি, পুকুর ও নদীতে ঢুকে পড়ায় লবণাক্ত পানির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০ শতাংশ লবণাক্ত পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে ২০৫০ সালে সারা দেশে খাবার পানি ও সেচের পানির জন্য মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ সঙ্কটে পড়বে।
জরিপে দেখা যায়, সারা দেশে বর্তমানে সুপেয় পানির সঙ্কটে ভুগছে প্রায় ৭৩ শতাংশ জনগণ। সিটি করপোরেশন এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য প্রতি লিটারে চার টাকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে এক টাকার অধিক গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভের পানি নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ খনন করতে এক হাজার থেকে দুই হাজার মিটার গভীরে যেতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজের জন্য পানি সঙ্কট চরম আকার ধারণ করে। সভায় নিরাপদ পানিব্যবস্থা জোরদার করতে ১০টি দাবি তুলে ধরা হয়।