দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
- আপলোড টাইম : ১০:০০:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৮
- / ৩২২ বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট: যত দিন যাচ্ছে ততোই বাড়ছে সরকারের বাণিজ্য ঘাটতি। রফতানি আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছর (জুলাই-জুন) শেষে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত অর্থবছরে দেশের পণ্য ও সেবা উভয় বাণিজ্যেই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যেই ঘাটতির পরিমাণ ৯২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় রফতানি আয় না বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চাপে রয়েছে। আমদানি বাড়লেই বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে ডলারের তুলনায় টাকা দুর্বল হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ে আমদানি ও শিল্পপণ্যের দামে। তাদের মতে, আমদানির এ প্রভাব উৎপাদনশীল খাতের বিনিয়োগে পড়লে অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে এই অর্থ যদি পাচার হয়ে থাকে তাহলে এর ফল অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাপের মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে এর মূল কারণ আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় রফতানি হয়নি। এখন এটি কমাতে হলে রফতানি বাড়াতে হবে; এর কোনো বিকল্প নেই। তবে সঠিকভাবে আমদানি হলে ব্যয় অনেকটা কমবে। যে হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে সেই হারে দেশে বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানির নামে অর্থপাচার হচ্ছে কি না তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে তিন হাজার ৬২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে পাঁচ হাজার ৪৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা বর্তমান বিনিময় হার (৮৪ টাকা) অনুযায়ী এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার বেশি। আলোচিত সময়ে, আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর বিপরীতে রফতানি বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গত অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। এখনো তা অব্যাহত আছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ৯৭৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। যা এর আগের অর্থবছরে ঋণাত্মক ছিল ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের মতে, আমদানির উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধিকে ঋণাত্মক ধারায় এনেছে। এর প্রভাবে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে এবং সামগ্রিক ভারসাম্যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে।
এদিকে আলোচিত সময়ে সেবা খাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৯১১ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৪৫৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৫৭ কোটি ডলার। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ৩২৮ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে আর্থিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের ঋণ এসেছে ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা আগের একই সময়ের তুলনায় ৭৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। বিদেশি ঋণ বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগ কমে এসেছে। এসময় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৭৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ কম। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। অর্থবছর শেষে শেয়ারবাজারে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার।