দামুড়হুদার ডুগডুগী বাজারের মেইন রাস্তার পাশ থেকে

প্রতিবেদক, দামুড়হুদা:
দামুড়হুদার ডুগডুগী বাজারে মেইন রাস্তার পাশ থেকে বিদ্যুতের পোলের প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। গত সোমবার আনুমানিক রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে টহলরত পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই চুরির ঘটনা ঘটায় চোর চক্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের ডুগডুগী গ্রামের গোরস্তানের অদূরে দামুড়হুদা-দর্শনা মহাসড়কের পাশে শাকিল রাইস মিলের পল্লী বিদ্যুতের সংযোগকৃত দর্শনা ২বি ৫২০৩০১ নম্বর পোলের প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। পোল থেকে ট্রান্সফরমার খুলে মাটিতে নামিয়ে ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা তামা ও তেল নিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা। প্রতিটি ট্রান্সফরমারের মূল্য ৭৫ হাজার ৮৫০ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে রাইস মিলের মিস্ত্রি দর্শনা আজিমপুরের শ্রী উত্তম চন্দ্র রাইস মিলে প্রতিদিনের ন্যায় কাজ করতে এসে দেখেন বিদ্যুৎ নেই। তিনি ভেবেছিলেন হয়ত বিদ্যুৎ চলে গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লোকনাথপুর গ্রামের রাসেল শাহ্র মাধ্যমে প্রথম জানতে পারেন সংযোগকৃত বৈদ্যুতিক পোলের তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে। খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ এবং পল্লী বিদ্যুতের দর্শনা অফিসের কর্মরত ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দর্শনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান ইমরান হোসেন বলেন, ‘এটা পরিকল্পিত চুরি। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মেইন লাইনের কাটাউট খুলে সংযোগ বন্ধ করে এই চুরি করেছে। ট্রান্সফরমারের হেঙ্গারের হ্যাজবল খুলে মাটিতে নামিয়ে ট্রান্সফর্মার ভেতর থেকে টিনের কোর খুলে কপারগুলো বা তামাগুলো নিয়ে পালিয়ে গেছে। ট্রান্সফর্মারের ক্যাচিংয়ের ভেতর যে তেল থাকে, সেটাও নিয়ে গেছে। বাদবাকি সব ফেলে গেছে। মূলত কপার অর্থাৎ তামা এবং তেল চোরের দল নিয়ে গেছে। ট্রান্সফর্মার ৩টা খুলতে আনুমানিক তাদের প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগতে পারে। ৩টি ট্রন্সফরমারের মধ্যে ২টা টিএস কোম্পানির এবং ১টা কনফিডেন্স কোম্পানির।
শাকিল রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শাকিল আহসান বিদেশে থাকায় রাইস মিলটি দেখাশুনার দায়-দায়িত্বে আছেন শকিলের স্ত্রীর ভাই জয়রামপুর গ্রামের মোস্তফা কামালের ছেলে তানভীর রহমান। তিনি বলেন, রাইস মিলটি চালু করার জন্য জমি থেকে শুরু করে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া পর্যন্ত প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের পোল এবং ট্রান্সফরমারও কেনা হয়েছে। এখন নতুন করে ট্রান্সফরমার বসাতে গেলে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে। প্রতিটা ট্রান্সফরমা ছিল ১৫ কেভির। রাইস মিলটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা এবং নতুন করে ট্রান্সফরমা না বসানো পর্যন্ত আপাতত বন্ধ থাকবে মিলটি।
দর্শনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ডুগডুগী শাকিল রাইস মিলের বিদ্যুৎ সংযোগকৃত পোল থেকে ৩টি ট্রান্সফরমা চুরি হয়ে গেছে। যদি প্রথমবার চুরি হয়, তাহলে গ্রাহকের অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করলে নতুন করে ট্রান্সফরমার দেওয়া হয়। আর যদি ২য় বার চুরি হয়, তাহলে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করে ট্রান্সফরমা নিতে হয়। এখন তাদের প্রথমবার চুরি হয়েছে কি না, এটা আমার জানা নেই, ফাইলপত্র দেখতে হবে। আমাদের দর্শনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে আজ বুধবার দামুড়হুদা মডেল থানায় একটা এফআইআর করা হবে। যে ট্রান্সফরমাগুলো চুরি হয়েছে, তার প্রতিটির ওজন আনুমানিক ১৩৫ কেজি হবে। এর মধ্যে ৩৫ কেজি তেল থাকে। তবে যারাই এ ধরণের দুঃসাহসিক চুরির কাজ করে, তারা খুব বেশি দামে এসব বিক্রি করতে পারে না।
দর্শনা পল্লী বিদ্যুত অফিসের এজিএম শামিম হোসেন বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি, তারপরও ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা শুনলাম। আমি দামুড়হুদা মডেল থানায় জিডি করার পরামর্শ দিয়েছি।’ এদিকে, মেইন রাস্তার পাশ থেকে এই ধরণের চুরির ঘটনায় এলাকাবাসী মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সফিউল আলম বলেন, বিষয়টি জানার পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।