দলিল লেখকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার; পকেটে চিরকুট!

চিরকুট লিখে চুয়াডাঙ্গা সদর সাব-রেজিষ্টার অফিসের দলিল লেখক কবীর আহম্মেদ ওরফে তেলা (৪৫) নামের এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালের দিকে নিজ বাড়ির অদূরে দরগার মাঠের লিছু বাগানে গলাই দড়ি দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে দুপুরেই দর্শনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত কবীরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। এসময় আত্মহত্যাকারী কবীরের জামার পকেট থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত কবীর আহম্মেদ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে ও চুয়াডাঙ্গা সাব-রেজিষ্টার অফিসের দলিল লেখক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কবীর পেশায় একজন দলীল লেখক। কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন মানুষের নিকট হতে টাকা-পয়সা ধার, দেনা করে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। পাওনাদারেরা তাদের সমুদয় টাকা ফেরত পেতে বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করতো কবীরের ওপর। এনিয়ে তাদের সংসারে মাঝেমধ্যেই কলহের সৃষ্টি হতো। এক সপ্তাহ পূর্বেও জমি বিক্রি করে মানুষের দেনা-পাওনা পরিশোধ করতে পরিবারের সদস্যরা ৩ লাখ টাকা দেয় কবীরকে। কিন্তু এই টাকা নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে গত ৩-৪ দিন ধরে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এরই জের ধরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় দলীল লেখক কবির আহম্মেদ।

স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, সকালে হঠাৎ শুনতে পারি দরগার মাঠের লিচু বাগানে গলাই দড়ি দিয়ে কেউ একজন আত্মহত্যা করেছে। সেখানে পৌঁছে জানতে পারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই মাঠের কয়েকজন কৃষক লিছু বাগানে একটি গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় কবীরের মরদেহ দেখতে পেয়ে গ্রামের লোকজনকে খবর দেয়। লোকমুখে খবর পেয়ে কবীরের পরিবারের সদস্যরা ছুটে যেয়ে গাছের ডাল থেকে হতে ঝুলন্ত কবীরের লাশ নিচে নামায়। খবর পেয়ে দর্শনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কবীরের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

উদ্ধারকৃত চিরকুটে যা লেখা ছিল:

আমাকে অনেকে ব্যবহার করেছে। কাজ শেষ করে আমাকে আবার ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এখন আমার কোনো মূল্য নেই, আমি জানি আত্মহত্যা মহাপাপ। তারপরেও আমি নিজেই এই পথ বেছে নিয়েছি, আল্লাহ আমাকে তুমি ক্ষমা করো। আমার এ মৃত্যুর জন্য কেউ দ্বায়ী নয়, আল্লাহ তুমি আমার স্ত্রী-সন্তান ও মাকে দেখে রেখো। আমি তোমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি।’ এই কথাগুলো লিখে রেখে আত্মহত্যা করেন কবীর আহম্মেদ।’

এবিষয়ে, দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, ঘটনাস্থল হতে নিহতর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া নিহতের ভাই টুটুল আহম্মেদ দর্শনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছেন।

এদিকে, গতকাল বিকেলে সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত কবীর আহম্মেদের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তশেষে রাতেই গ্রামের কবরস্থানে কবীরের লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।