থামছে না স্বজনদের আর্তনাদ

নারায়াণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ, মৃত্যু বেড়ে ২৬
সমীকরণ প্রতিবেদন:
নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬। গতকাল রোববার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে এ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ ৩৭ জনের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন বাকি ১১ জন। এদের মুখ, শ্বাসনালিসহ শরীরের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পুড়ে গেছে। মুমূর্ষু অবস্থায় ৬ জনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। প্রিয়জনের সর্বশেষ খবর পেতে দগ্ধদের স্বজনরা বার্ন ইন্সটিটিউটের বাইরে দিন-রাত প্রতীক্ষার প্রহর পার করছেন। মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছে। নারায়ণগঞ্জের মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কারণ উদ্ঘাটনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন ১৩ জন। তাদের সবার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এর মধ্যে ৬ জন রয়েছেন আইসিইউতে। এরা হলেন- ফরিদ (৫৫), শেখ ফরিদ (২১), মনির (৩০), আবুল বাসার মোল্লা (৫১), মো. কেনান (২৪), নজরুল ইসলাম (৫০), সিফাত (১৮), আবদুল আজিজ (৪০), হান্নান (৫০), আবদুস সাত্তার (৪০), আমজাদ (৩৯), মামুন (২৩) এবং ইমরান। বার্ন ইন্সটিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তাদের প্রত্যেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুক্রবার বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের দেখতে রোববার ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে আসেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ ঘটনায় কারও অবহেলার প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেন তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, আহতদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্রসহ সব বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। অন্যদিকে পোড়া রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দেশের সব হাসপাতালে ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, এখানে এমন আরও অনেক স্থাপনা রয়েছে যেগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমি জোরালো দাবি জানাব, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সে সময় মসজিদে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষের সবাই কমবেশি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে যে ৩৭ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল, তাদের ২৪ জন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
অবহেলার অভিযোগে পুলিশের মামলা :
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় বিস্ফোরণে অবহেলার কথা উল্লেখ করে এজন্য সাত কারণ উল্লেখ করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মসজিদ কমিটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে এ আগুনের সূত্রপাত এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, মামলা হয়েছে। তদন্তে যাদের অবহেলা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলাটির তদন্ত চলছে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছে না। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা করেছে। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, তিতাস, ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর যদি কারও বিরুদ্ধে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায় তখন তার বিরুদ্ধে এ মামলায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাসের যে গ্যাসের পাইপ গেছে, সেখানে লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি পৃথক কমিটি গঠন করেছে। সব তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছে।