
সমীকরণ প্রতিবেদন:
তুরস্কে আবারো অলৌকিক ঘটনা। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্প আঘাত হানার ১০ দিন ২০ ঘণ্টা পরে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তিনজনকে। এর মধ্যে এক বালকের বয়স মাত্র ১২ বছর। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানার প্রায় ১১ দিন পর ১২ বছর বয়সী বালক ওসমান হালেবিয়ে, ২৬ বছর বয়সী যুবক মেহমেত আলি সাকিরোগলু এবং ৩৪ বছর বয়সী মুস্তাফা আভসিকে জীবিত উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। টিআরটি ওয়ার্ল্ড। এ দিন ওসমানকে উদ্ধার করা হয় তুরস্কের হাতায় প্রদেশের আন্তাকিয়া শহরে ধসে পড়া একটি ভবনের নিচ থেকে। সে বিদেশী নাগরিক বলে জানা গেছে। তবে তার জাতীয়তা নিশ্চিত করা হয়নি। তুর্কি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেটিন কোকা স্থানীয় একটি হাসপাতালে ছেলেটিকে দেখতে গিয়েছিলেন। এ দিন মেহমেত আলি এবং মুস্তাফা আভসি নামে দুই যুবককেও একই শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের উদ্ধারের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান আনন্দিত স্বজনরা। সেখানে দু’জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তুরস্ক-সিরিয়ায় চলতি শতাব্দীর ভয়াবহতম ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তুর্কিয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আর সিরীয় সরকার ও জাতিসঙ্ঘের তথ্য বলছে, দেশটিতে প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ৮০০-এর বেশি। সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে মারা গেছেন এক হাজার ৪১৪ জন। আর বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চচলে প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৪০০। তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ এ ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত মুছতে আরো বহুদিন লেগে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘শতাব্দীর ভয়াবহতম’ এ ভূমিকম্পে মোট ৫০ হাজার ৫৭৬টি ভবন পুরোপুরি ধসে পড়েছে অথবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়ন অব চেম্বারস অব তুর্কি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টসের (টিএমওবিবি) সভাপতি ইয়ুপ মুহকু বলেছেন, বিধ্বস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে ‘উল্লেখযোগ্য সময়’ লেগে যাবে। তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পের দ্বিতীয় সপ্তাহেও চলছে উদ্ধারকাজ। জাতিসঙ্ঘ সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের জন্য ৪০ কোটি ডলার সহায়তা জরুরি বলে জানায়। সংস্থাটি এখন আরো জানিয়েছে, তুরস্কের দুর্গত এলাকার মানুষদের জন্য ১০০ কোটি ডলার সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস গত সপ্তাহে তুরস্কের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘অবর্ণনীয় কষ্ট পাচ্ছেন তারা। আমাদের অবশ্যই তাদের অন্ধকার সময়ে পাশে দাঁড়াতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন।’ তুরস্কে এখনো উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রতিদিন উদ্ধার হওয়া মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এখনো নিখোঁজ স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করছেন। যদি তারা ‘অলৌকিকভাবে’ বেঁচে যান সে আশায়। ভবন নির্মাণে মানা হয়নি বিল্ডিং কোড, এমন অভিযোগ করছেন তারা। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে এসব এলাকায়। যদিও তুরস্কের সরকার ভবনধসের ঘটনা তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে। কারও গাফিলতি পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও কথা জানিয়েছে তারা। ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরের দিকে যখন মানুষজন ঘুমিয়ে ছিলেন ঠিক তখনই আঘাত হানে এই ভূমিকম্প। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, সেদিন স্থানীয় সময় ৪টা ১৭ মিনিটে প্রথম কম্পন অনুভূত হয়। এরপর আঘাত হানে আরো একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। কম্পনের উৎসস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ প্রদেশ। পূর্ব দিকের নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে তুরস্ক, সিরিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে তুরস্ক ও সিরিয়া।