
সমীকরণ প্রতিবেদন:
রাজধানীর ৬২ থানায় সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার পদযাত্রা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে তুরাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানার কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদিকে দুপুরের পর মহানগরের দুই প্রান্তে হাজারো নেতা-কর্মী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
উত্তরা পূর্ব থানার আলাওল এভিনিউ সড়কে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘দশম ও একাদশ সংসদের মতো তামাশার নির্বাচন এবার জনগণে হতে দেবে না। আওয়ামী লীগ মনে করেছে, তারা যেভাবে গত দুইটা নির্বাচন করেছে এবারো ওইভাবে নির্বাচন করে নিয়ে যাবে। আবারো সেইভাবে জনগণকে শোষণ করবে, জনগণের সম্পদ লুট নিয়ে যাবে। এবার মানুষ এটা হতে দেবে না। মানুষ রাস্তায় নেমেছে। আন্দোলনের পর আন্দোলন হচ্ছে, রাজপথে আন্দোলন হচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সেই আন্দোলনকে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এবার আমরা আর কোনো ভোট চুরির নির্বাচন, তামাশার নির্বাচন, আওয়ামী লীগের জবরদস্তির নির্বাচন হতে দেবো না, এ দেশের মানুষ হতে দেবে না।’
নেতা-কর্মীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আমাদের এই আন্দোলন জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন, আমাদের এই আন্দোলন সমগ্র মানুষের যে কথা বলার অধিকার, সেই অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন।’ তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমরা এই আন্দোলনে আছি, পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকব। আমরা শান্তির সাথে আন্দোলন করছি, শান্তির সাথে এই আন্দোলনে থাকব। আমাদের বাধা দিলে সেই বাধা অবশ্যই আমরা অতিক্রম করে যাব। জনগণ আমাদের সাথে আছে। এই জনগণ বাধা প্রতিরোধ করবেই করবে। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য, বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ মহানগর ও জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।
উত্তরা থানা বিএনপির উদ্যোগে উত্তরা পাবলিক কলেজের সামনের সড়কে দুপুরে পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীরা সমবেত হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তোমার নিজের মতো করে কাটাঁেছড়া করে তোমাদের মতো করে ছাপিয়ে নিয়েছ, যেখানে জনগণের কোনো অধিকার নাই সেই সংবিধান? যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারে না, ভোট দিতে যায় না। আপনাদের মনে আছে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচন মানুষ ভোটের দিতে পারে নাই, মানুষ ভোট দিতে যায়নি। ভোট কেন্দ্রগুলোতে কুকুর-বিড়াল দেখা গেছে। জাগপার মরহুম নেতা শফিউল আলম প্রধান বলেছিলেন, কুত্তা মার্কা নির্বাচন। তিনি বলেন, আবার এই সরকার একটা পাতানো নির্বাচন, সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করতে চলেছে। তারা বারবার করে বলছে, ভোট হবে এই সরকারের অধীনে। এই সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে ভোট নিরপেক্ষ হতে পারে? এই ভোট নিরপেক্ষ হতে পারে না।
এই সরকারের অধীনে কি আবারো নির্বাচনে যাব কিনা নেতা-কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা ‘না’ সূচক স্লোগান দিতে থাকেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সবার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তবেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের মাধ্যমেই জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার গঠন করতে হবে।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ফলাফল নিয়ে সরকারের অদক্ষতার। কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ অসংখ্য নেতা এখনো কারাগারে আছেন। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ তাকে গুম করে দেওয়া হয়েছিল, তাকে গুম করে দেওয়ার পরে ভারতে ফেলে রেখে আসা হয়েছিল। তাকে সেখানে মামলায় কারাবরণ করতে হয়েছে। সেখানকার আদালত তাকে মুক্ত করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা আজকে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক। আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
উত্তরা-পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানও বক্তব্য দেন। পরে বিএনপি সচিব আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন।