ধর্ম ডেস্ক: তাকদিরে বিশ্বাস করা ইমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাকদিরের শব্দমূল হচ্ছে কদর। এর অর্থ হচ্ছে পরিমাণ নির্ধারণ, পরিমাপ, পরিমিতি, মূল্যায়ন, নির্দিষ্ট সীমা, মূল্য নিরূপণ, অদৃষ্ট, নিয়তি, ভাগ্য ইত্যাদি। তাকদির হচ্ছে আল্লাহর বিশ্বজনীন নিয়মনীতি। এই নিয়মনীতি ও ব্যবস্থাপণা প্রক্রিয়ার অধীনে বিশ্বজগৎ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বের তার কোনো শরিক নেই। তিনি তাবৎ কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে’ (সূরা ফোরকান: ২)। এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, সৃষ্টি জগতের মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর প্রত্যেকটিকে এক নির্ধারিত পরিমাপে সৃষ্টি করেছেন এবং যে পরিকল্পনাধীনে ও উদ্দেশ্যে যা সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে সেই অনুযায়ী স্বভাবগুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এটা কোরানে বলা হয়েছে এভাবে, ‘নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে’ (সূরা কামার: ৪৯)। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন এই চেতনা লালন করা এবং তার বিধিব্যবস্থায় সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই শান্তি ও মঙ্গল নিহিত রয়েছে। কোনো কল্যাণকর কিছু ঘটলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে আর অকল্যাণকর কিছু ঘটলে তওবা-ইস্তিগফার এবং ধৈর্যধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য পাওয়ার ইচ্ছা প্রবল করতে হবে এবং তদনুযায়ী আমল বা চেষ্টা-তদবির করে যেতে হবে। কারণ তাকদিরের সঙ্গে তদবিরের বা কর্মের কোনো সংঘাত নেই। তদবিরের ওপর দৃঢ়বিশ্বাস রেখে কাজ করে যেতে হবে। কার্য সম্পাদনের জন্য, সুফল ও কল্যাণ লাভের জন্য উপায়-উপকরণ ইত্যাদি অবলম্বনের মধ্যেই তদবিরের মর্ম নিহিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সে (মানুষ) ভালো যা উপার্জন করে তা তারই এবং সে মন্দ যা উপার্জন করে সেটাও তারই’ (সূরা বাকারা: ২৮৬)। তাকদির যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত এ দৃঢ়বিশ্বাস রাখতে হবে। মানুষ মন্দ তাকদির পরিবর্তন করতে পারে আল্লাহর দরবারে যথাযথভাবে দোয়ার মাধ্যমে। ইসলামে যে সমস্ত বিষয়ের প্রতি ইমান আনা অপরিহার্য করা হয়েছে তার মধ্যে তাকদিরও রয়েছে। তাই তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতেই হবে।