সমীকরণ প্রতিবেদন:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাৎক্ষণিক ঝটিকা মিছিল করেছে দলটি। জানা গেছে, চলমান ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষে একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে আগামী রবি ও সোমবার হরতালের কর্মসূচি দেবে বিএনপি। আজ বিকেলে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল সন্ধ্যায় ইসির তফসিল ঘোষণার পরপরই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদণ্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনা মার্কা একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তফসিল-রঙ্গ জনগণ মানে না। এই নীলনকশার নির্বাচনের তফসিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল- বিএনপির পক্ষ থেকে আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারো হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে তার পুরো দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে। এই সঙ্কটের কারণে আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে চিরকাল দায়ী থাকতে হবে। জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরো তীব্র, আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতি দ্রুতই আওয়ামী নাৎসি সরকারের পতন ঘটবে। রিজভী বলেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সবার বিচার করবে জনগণ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। এ কথা ডাহা মিথ্যা, ভণ্ডামিপূর্ণ এবং মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার শামিল।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন মূলত আওয়ামী কমিশন। শেরেবাংলা নগরে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সন্ত্রাসী বাহিনীর পাহারা এবং রায়টকার, জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে শত শত পুলিশ র্যাব-বিজিবি বেষ্টিত ইসি ভবনে বসে কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশে ভাষণে সিলেকশন ভোটের তফসিল ঘোষণা করে গোটা দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করল। অতীতে রকীব-হুদা কমিশনের মতোই কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দলদাসত্বের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে গণশত্রুতে পরিণত হলো। তিনি বলেন, তফসিল দিলেন আর পুলিশি ভোটের মাধ্যমে ফল ঘোষণা করে ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষা করলেন, এত সহজ নয়। নির্বাচনের একটা ঘোষণা দিলেন, আর নির্বাচন হয়ে গেল! এই দিবাস্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন। এসব তফসিল-টপসিল বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা।
জানা গেছে, চলমান বৈরী পরিস্থিতিতেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফায় অনড় দলটি। রাজপথে কঠোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে চায় দলটি। গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সিরিজ বৈঠকে একতরফা তফসিল ঘোষণার বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেও অনড় রয়েছে দলটির হাইকমান্ড। জানা গেছে, হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে শিগগিরই অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে জানিয়ে নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে মাঠে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে নির্বাচনমুখী নেতাদের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে শর্তহীন সংলাপ বসার আহ্বান জানিয়ে বড় তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এর দু’দিন আগে দেশে বর্তমানে সুষ্ঠু নির্বাচন ও তপসিল ঘোষণার পরিবেশ নেই দাবি করে তপসিল ঘোষণার প্রক্রিয়া দুই সপ্তাহ পেছানো এবং দলের শীর্ষ নেতাদের জামিনে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে বার্তা দিয়েছিল বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির কোনো কোনো নেতার ধারণা ছিল, ডোনাল্ড লুর ওই চিঠি এবং নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে বিএনপির দুই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো তপসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেয়া হতে পারে। একই সাথে সরকারের পক্ষ থেকে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হবে; কিন্তু বাস্তবতা তাদের আশার সাথে মেলেনি।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত দুই সপ্তাহে চার দফায় দেশব্যাপী ৯ দিনের অবরোধ এবং এক দিনের হরতাল পালন করেছে বিএনপি ও শরিকরা। পঞ্চম দফায় দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার প্রথম দিন দেশব্যাপী বিক্ষিপ্তভাবে অবরোধের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। জানা গেছে, শুক্র ও শনিবার বাদ দিয়ে আগামী সপ্তাহে রবি ও সোমবার ফের হরতালের কর্মসূচি আসছে। সেটি টানা ৪৮ ঘণ্টা অথবা রোববার সকাল-সন্ধ্যা এবং সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হতে পারে।