চুয়াডাঙ্গা শুক্রবার , ২৭ নভেম্বর ২০২০

টোটন না জিপু, কে বইবেন বৈঠা?

সমীকরণ প্রতিবেদন
নভেম্বর ২৭, ২০২০ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মেহেরাব্বিন সানভী:
কে হবেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার মাঝি, তাই নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা সবাই এখন ঢাকায়। চলছে উচ্চ পর্যায়ের তদবির আর দৌঁড়ঝাপ। প্রশ্ন উঠছে পৌর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ থেকে যাঁর নাম পাঠানো হবে, তিনিই হবেন কি নৌকার মাঝি, নাকি আগের কয়েকটি উদাহরণের মতো নাম না পাঠিয়েও কেন্দ্র থেকে নৌকার মাঝি হয়ে আসবেন অন্য কেউ। মূলত চায়ের দোকান থেকে শুরু করে চুয়াডাঙ্গা শহর তথা জেলাজুড়েই এখন টক অব দ্য টাউন, কে পাবেন নৌকা? কার কোন কোন কারণে কার সম্ভাবনা বেশি, তা নিয়ে চলছে নানা রকম যুক্তিতর্ক-বিতর্ক আর বিশ্লেষণ।
চুয়াডাঙ্গাসহ সারা দেশের ২৫টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ৩ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই ও ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। আসন্ন এই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের তিন নেতা ইতোমধ্যে শুরু করেছেন কেন্দ্রে যোগাযোগ। সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান আহ্বায়ক ও বর্তমান পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরিফ হোসেন দুদু মনোয়ন পেতে চেষ্টায় করছেন। ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার তারেক আহমেদের কাছ থেকে তিন প্রার্থীর পক্ষেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, নৌকার মনোনয়ন নিয়ে মূল লড়ায়ে আছেন রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন ও ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ছোটভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন মাঠে আছেন প্রথম থেকেই। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ২০০৮ থেকে ২০১৫ মেয়াদের মেয়র। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন দৌঁড়েও তাঁর অবস্থান প্রাথমিকভাবে আগে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। কারণ হিসেবে দেখছেন, পৌর আওয়ামী লীঘ তথা জেলা থেকে তাঁর নাম প্রস্তাব করাকে। তিনি বলছেন, নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার চিত্র পাল্টে দেবেন। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় যতটুকু কাজ হয়েছে, সেটা তার সময়ের প্রকল্পের কাজ।
মেয়র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, ‘আমার প্রতি পৌরবাসীর সমর্থন আছে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তার সবটাই আমার সময়ের। পৌরবাসী আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করব। মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে ক্রিয়েটিভ চিন্তা ভাবনা করে পৌরবাসীর সেবা করব।’ তিনি বলেন, ‘জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি ওয়ার্ড কমিটি থেকে শুরু করে দলের প্রত্যেকটি কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে ছিলাম এবং একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। করোনাকালীন সময়েও আমি দল এবং সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম। আমি মনে করি, একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দল তাঁর নিবেদিত কর্মীকেই মনোনয়ন দেবে। সেই হিসেবে আমি শতভাগ আশাবাদী মনোনয়ন আমিই পাব।’
এদিকে, মেয়র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের সাথে বিভিন্ন নির্বাচনী গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন হেলাকে দেখা গেছে। তিনি বিভিন্ন স্থানে তাঁর ভোটও চেয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন হেলার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শুধুমাত্রই একজন মেয়র হিসেবে নয়, যোগ্য নেতা হিসেবেও রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন পারফেক্ট। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলকে সুসংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভাকেও তিনি আধুনিকায়ন করেছেন। তিনি ডিজিটাল চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার রূপকার। তিনি বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভায় পৌর আওয়ামী লীগের ৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি মহোদয় নিজেও পৌর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য। তিনি নিজেও এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এই বিশেষ সভায় পৌর নির্বাচনে রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনকেই মেয়র প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অপর দিকে, বর্তমান মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু গত নির্বাচনে মোবাইল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন। তিনি বলছেন, নির্বাচিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আমার সময়ে আর্সেনিকমুক্ত শোধনাগার স্থাপন হয়েছে। যার পানির কারণে চুয়াডাঙ্গাবাসী বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন। ৩৭ জেলা অবকাঠামো প্রকল্প, ইউজিআইপি-৩ ও গুরুত্বপূর্ণ শহরের ১০০ কোটি টাকার উন্নয়নের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমি মনে করি দেশে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা তারই ধারাবাহিতকার অংশ। আমার পরিকল্পিত কাজের বাকি কাজ শেষ হলে চুয়াডাঙ্গার শুধু সৌন্দর্যই বৃদ্ধি পাবে না, রীতিমত দৃশ্য বদলে যাবে। আমি আশাবাদী, বাকি কাজ শেষ করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ দিবেন।’
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুকে সমর্থন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র হিসেবে জিপুই যোগ্যপ্রার্থী। তাঁর সময়ে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ইতিহাসে সবথেকে বেশি উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০২ কোটি টাকার কাজ প্রায় শেষের দিকে। আরও ৪৭ কোটি টাকার কাজ আসছে। পৌরবাসীর প্রতি তাঁর ব্যবহার আচরণ সবকিছুই ভালো। মানুষের সাথে তিনি মিশতে জানেন। তাঁর কাছে সাধারণ মানুষ সুবিধা-অসুবিধার কথা বলতে পারে। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে আমরা তাঁকেই মেয়র হিসেবে চাই। দলীয় প্রত্যেকটি কাজে তিনি এগিয়ে। দলের প্রত্যেকটি নির্দেশ তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। দলের প্রতি তিনি নিবেদিত প্রাণ। কেন্দ্র সবকিছু জানে। কে কী রকম নেতা, সেটাও দলের কেন্দ্রের নেতৃবৃন্দ জানেন। আমার পূর্ণ বিশ্বাস একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দল তাঁকেই মনোয়ন দিবে।’
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর সমর্থন করছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা অধ্যক্ষ মাহাবুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ‘একজন পৌর মেয়র হিসেবে ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন, সমস্যা সমাধান করেন। তাঁর ব্যবহার অমায়িক। সাধারণ পৌরবাসী তাঁকে ভালোবাসে। তাঁকে চাই। গত নির্বাচনে সেটা আমরা দেখেছি। একজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও তিনি সারা দেশের পৌরসভাগুলোর মধ্যে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভোটের দিকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা এখনো শীর্ষে। আর আওয়ামী লীগ এমন প্রার্থীকেই প্রাধান্য দিবে। কেন্দ্র সবকিছু জানে। আমরা পৌর আওয়ামী লীগের নির্দেশা অনুযায়ী মনোনয়ন পেতে আবেদন করেছিলাম। এখন পৌর আওয়ামী লীগ প্রস্তাব পাঠিয়েছে কিনা, সেটা আমরা নিশ্চিত নয়। তবে এর আগেও এরকম উদাহরণ আছে, জেলা থেকে প্রস্তাব না পাঠিয়েও দল মনোনয়ন দিয়েছে প্রার্থীর কার্যক্রম এবং জনপ্রিয়তা দেখে। আমরা আশাবাদী সফল মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর রাজনৈতিক আদর্শ, মানুষের ভালোবাসা, জনপ্রিয়তা, সততা, নিষ্ঠাসহ দলের প্রতি তাঁর নিবেদিত হওয়ার মূল্য দল দিবে। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দল তাকে মনোনয়ন দিবে।’
অপর দিকে, মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরিফ হোসেন দুদু। ইতোমধ্যে তাঁর পক্ষে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার পিতার একটি বর্ণাঢ্য আওয়ামী রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। তিনি দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। আমি সেই সেই সেভেন এইট থেকে ছাত্রলীগের সাথে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকেই জীবনের সবকিছু মনে করি। আমি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। সব সময় সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছি। তাছাড়া পৌরবাসীও আমাকে চাই। তাই আমি আশাবাদী পৌর নির্বাচনে আমাকে দল মনোনয়ন দিবে।’
প্রসঙ্গত, আগামী ১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। যাঁরা দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তাঁদেরকে অবশ্যই ১ ডিসেম্বরের মধ্যে দলীয় প্রার্থীতার চিঠিসহ মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। আর যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাঁদেরকে একশ জন ভোটারের সমর্থনকৃত স্বাক্ষর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। সে হিসেবে আগামী ১লা ডিসেম্বরের আগেই জানা যাবে কে হবেন নৌকা মাঝি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।