ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহের বীরাঙ্গনা পদবী প্রাপ্ত ফাতেমা বেগম নামে এক মুক্তিযোদ্ধার দুইটি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আধুনিক শক্তিশালী তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কীভাবে ফাতেমা বেগম দুইটি জাতীয় পরিচয়পত্র করতে সক্ষম হলেন এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন ব্যক্তি বিশেষের দায় নির্বাচন কমিশন নিবে না। তার বিরুদ্ধে মামলা ও দুইটি পরিচয়পত্র বাতিল হতে পারে। তবে বিভিন্ন সময় কাজের প্রয়োজনে যে ফাতেমা বেগম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন সেটা সন্দেহ করছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের সার্ভেয়ারে ফাতেমা বেগমের রয়েছে দুইটি জাতীয় পরিচয়পত্র। এসব জাতীয় পরিচয়পত্রে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা, জন্ম তারিখ ও রক্তের গ্রুপ। অভিযোগ উঠেছে তিনি নিজের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঠিকানায় এসব জাতীয় পরিচয়পত্র করেছেন। এসব জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সরকারী বিভিন্ন দপ্তর থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ফাতেমা খাতুন ঝিনাইদহের কামারকুন্ডু গ্রামের ঠিকানায় ভোটার কার্ড করেন। তাঁর প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্রে মোছা. ফাতেমা বেগম, পিতার নাম লালু মন্ডল ও মাতার নাম রহিমা বেগম এবং শাবানা কাতুন লেখা হয়েছে। সেখানে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১১/০৮/১৯৬৯। রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। ভোটার আইডি নম্বর ১৯৬৯৪৪২১৯০৩১২১১২৫। দ্বিতীয় জাতীয়পত্রে লেখা হয়েছে মোছা. ফাতেমা বেগম, পিতা লালু মন্ডল ও স্বামী শুকুর আলী, রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ, জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ৭/০২/১৯৪৯, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৪৯৪৪১৩৩৮১০০০০০৫ এবং এখানে ঠিকানা লেখা হয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্ল্যাকুয়া গ্রাম। শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি এবং ভোটার নম্বর ৪৪১৩৫৭০০০০৯৯।
ফাতেমা খাতুনের প্রথম বিয়ে হয় কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের সাথে। এখানে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে হয় একই উপজেলার হাসানহাটি গ্রামের সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। তৃতীয় বিয়ে হয় কালীগঞ্জ উপজেলা মোল্ল্যাকুয়া গ্রামের শুকুর আলীর সাথে। তিনি শুকুর আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী। এখানে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই ফাতেমা বেগম ঝিনাইদহে বসবাস করছে।
ফাতেমা বেগম জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রাম থেকে পিতার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার চন্ডিপাড়া যাওয়ার পথে মাহমুদপুর এলাকায় পৌছালে পাক-হানাদার বাহিনীরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পাক বাহিনীর হাত থেকে তিনি ফিরে আসলেও স্বামী সিরাজুল তাকে গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাকোয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী তাকে বিয়ে করেন। তবে তিনি দুইটি পরিচয়পত্র নিয়ে কিছুই বলেননি।
এবিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিসার রোকনুজ্জামান জানান, এমন অভিযোগ আমার কাছে নেই। তবে ফাতেমা খাতুনের দুইডি পরিচয়পত্রের নাম্বার পেলে মন্তব্য করা যাবে।