ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

ঝিনাইদহে ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে চরমোনাই পীর

বারবার নেতা নয়, নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করুণ

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১১:১৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৪ বার পড়া হয়েছে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেছেন, বারবার নেতা পরিবর্তন না করে নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে আমাদের বারবার রক্ত দিতে হবে। নেতা পরিবর্তনের মাধ্যমে কখনো শান্তি ও বৈষম্য আসতে পারে না। দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর এ দেশের মানুষ বহুবার রক্ত দিয়েছে, আন্দোলন করেছে, কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম হয়নি। নিজে পরিবর্তন হয়ে দেশ পরিবর্তন করতে হবে। ’

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম গতকাল বুধবার বিকেলে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যায় জড়িতদের বিচার, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, দুর্নীতিবাজদের বিচার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি ডা. এইচ এম মোমতাজুল করীমের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আহমদ আব্দুল জলিল, ঝিনাইদহ জেলা সেক্রেটারি প্রভাষক মাওলানা শিহাব উদ্দীন, ক্বারী ওমর আলী, মুহাম্মদ রায়হান উদ্দীন, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল, মাওলানা নিজাম উদ্দীন মুন্সি মাুলানা মিরাজ হুসাইন, মুফতি নাজির আহম্মেদ, মুফতি মুহাম্মাদ আলী হুসাইন, মাওলানা শহীদুল ইসলাম, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মুহাম্মদ ফারুক হোসেন ও এইচ এম নাঈম মাহমুদ বক্তব্য দেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম আরও বলেন, এই ভূখণ্ড মুসলমানরা শাসন করেছে। কিন্তু কিছু মুনাফেকদের কারণে আমরা পরাজিত হয়েছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সে সময় দিল্লির ষড়যন্ত্রে ৮০ হাজার মাদ্রাসা ধ্বংস করা হয়েছে। আলেমদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। হাজার হাজার আলেম হত্যা করা হয়েছে। ব্রিটিশরা যখন দিল্লি দখল করেছিল, তখন ওলি-আওলিয়ারা আন্দোলন করে এই ভূখণ্ড থেকে তাদের বিতাড়িত করেছিল। কিন্তু মুসলমানরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু জমিদাররা বিশেষ করে রবি ঠাকুর চিঠি লিখে ৪১ বার বাঁধা দিয়েছিল। তারপরও নবাব স্যার সলিমুল্লাহ (র.) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। যখন রক্ত দিয়ে মুসলমানরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল, আর সেই মুসলমানদেরকে বলা হয় সাম্প্রদায়িক।

তিনি বলেন, এই উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে মুসলমানরা রক্ত দিয়ে অবদান রেখেছে। তাই এই দেশ মুসলমানদের হলেও অধিকার সবার। তিনি বলেন, পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। সেই পাকিস্তান গঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলমানরা। তিনি বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আবারো বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। দেশের মানুষ আবারো যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিকতা, ন্যায়বিচার ও সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর ৭২ সালের সংবিধানে মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতো কুফরি মতবাদ চাপিয়ে দেয় ভারত। ভারতের প্রেসক্রিপশনে সংবিধান লেখা হয়। ফলে দেশের মানুষ সাম্য ও ন্যায় বিচরার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা এই দেশটা লুটপাট করেছে। তার মন্ত্রী, এমপি ও সাধারণ নেতা-কর্মীরা শত নয়, হাজার নয়, লাখ লাখ কোটি টাকার মালিক। যে দেশে শেখ হাসিনার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়, পিয়ন হেলিকপ্টারে ঘোরে, ফরিদপুরের ছাত্রলীগ নেতা দুই হাজার কোটি পাচার করে, মন্ত্রীরা কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করে, বিদেশে ভূমি মন্ত্রীর হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়ি পাওয়া যায়, সে দেশের অর্থনীতির আর কি অবশিষ্ট থাকতে পারে? তিনি বলেন, হাসিনার আমলে যুবলীগ নেতা সম্রাট সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনো খেলে ২০০ কোটি টাকা হারে, ১৪ কোটি লাখ টাকা পাচার করা হয়, ৯৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় এটাই কি দেশের মানুষ চেয়েছিল?

তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগ কওে, তাদের জন্য সাত খুন মাফ হবে, এটা সাম্যতা হতে পারে না। এ জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। তিনি বলেন, আমরা মুসলিম লীগ দেখেছি, আওয়ামী লীগ দেখেছি, জাতীয় পার্টি দেখেছি, বিএনপি দেখেছি। কিন্তু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে দেখিনি। তাই আসুন দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, ঘুষ দুর্নীতি ও কালো টাকার নির্বাচন বন্ধ করতে হলে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চাই।
তিনি বলেন, দেশে যদি কেউ মডারেট ইসলাম কায়েম করতে চায়, সে বেইমান হয়ে যাব। দেশে কারো মনগড়া ইসলাম কায়েম করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী যারা লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে, তাদের প্রত্যাখান করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরে তিনি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে চরমোনাই পীর

বারবার নেতা নয়, নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করুণ

আপলোড টাইম : ১১:১৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেছেন, বারবার নেতা পরিবর্তন না করে নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে আমাদের বারবার রক্ত দিতে হবে। নেতা পরিবর্তনের মাধ্যমে কখনো শান্তি ও বৈষম্য আসতে পারে না। দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর এ দেশের মানুষ বহুবার রক্ত দিয়েছে, আন্দোলন করেছে, কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম হয়নি। নিজে পরিবর্তন হয়ে দেশ পরিবর্তন করতে হবে। ’

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম গতকাল বুধবার বিকেলে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যায় জড়িতদের বিচার, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, দুর্নীতিবাজদের বিচার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি ডা. এইচ এম মোমতাজুল করীমের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আহমদ আব্দুল জলিল, ঝিনাইদহ জেলা সেক্রেটারি প্রভাষক মাওলানা শিহাব উদ্দীন, ক্বারী ওমর আলী, মুহাম্মদ রায়হান উদ্দীন, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল, মাওলানা নিজাম উদ্দীন মুন্সি মাুলানা মিরাজ হুসাইন, মুফতি নাজির আহম্মেদ, মুফতি মুহাম্মাদ আলী হুসাইন, মাওলানা শহীদুল ইসলাম, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মুহাম্মদ ফারুক হোসেন ও এইচ এম নাঈম মাহমুদ বক্তব্য দেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম আরও বলেন, এই ভূখণ্ড মুসলমানরা শাসন করেছে। কিন্তু কিছু মুনাফেকদের কারণে আমরা পরাজিত হয়েছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সে সময় দিল্লির ষড়যন্ত্রে ৮০ হাজার মাদ্রাসা ধ্বংস করা হয়েছে। আলেমদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। হাজার হাজার আলেম হত্যা করা হয়েছে। ব্রিটিশরা যখন দিল্লি দখল করেছিল, তখন ওলি-আওলিয়ারা আন্দোলন করে এই ভূখণ্ড থেকে তাদের বিতাড়িত করেছিল। কিন্তু মুসলমানরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু জমিদাররা বিশেষ করে রবি ঠাকুর চিঠি লিখে ৪১ বার বাঁধা দিয়েছিল। তারপরও নবাব স্যার সলিমুল্লাহ (র.) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। যখন রক্ত দিয়ে মুসলমানরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল, আর সেই মুসলমানদেরকে বলা হয় সাম্প্রদায়িক।

তিনি বলেন, এই উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে মুসলমানরা রক্ত দিয়ে অবদান রেখেছে। তাই এই দেশ মুসলমানদের হলেও অধিকার সবার। তিনি বলেন, পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। সেই পাকিস্তান গঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলমানরা। তিনি বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আবারো বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। দেশের মানুষ আবারো যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিকতা, ন্যায়বিচার ও সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর ৭২ সালের সংবিধানে মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতো কুফরি মতবাদ চাপিয়ে দেয় ভারত। ভারতের প্রেসক্রিপশনে সংবিধান লেখা হয়। ফলে দেশের মানুষ সাম্য ও ন্যায় বিচরার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা এই দেশটা লুটপাট করেছে। তার মন্ত্রী, এমপি ও সাধারণ নেতা-কর্মীরা শত নয়, হাজার নয়, লাখ লাখ কোটি টাকার মালিক। যে দেশে শেখ হাসিনার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়, পিয়ন হেলিকপ্টারে ঘোরে, ফরিদপুরের ছাত্রলীগ নেতা দুই হাজার কোটি পাচার করে, মন্ত্রীরা কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করে, বিদেশে ভূমি মন্ত্রীর হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়ি পাওয়া যায়, সে দেশের অর্থনীতির আর কি অবশিষ্ট থাকতে পারে? তিনি বলেন, হাসিনার আমলে যুবলীগ নেতা সম্রাট সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনো খেলে ২০০ কোটি টাকা হারে, ১৪ কোটি লাখ টাকা পাচার করা হয়, ৯৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় এটাই কি দেশের মানুষ চেয়েছিল?

তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগ কওে, তাদের জন্য সাত খুন মাফ হবে, এটা সাম্যতা হতে পারে না। এ জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। তিনি বলেন, আমরা মুসলিম লীগ দেখেছি, আওয়ামী লীগ দেখেছি, জাতীয় পার্টি দেখেছি, বিএনপি দেখেছি। কিন্তু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে দেখিনি। তাই আসুন দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, ঘুষ দুর্নীতি ও কালো টাকার নির্বাচন বন্ধ করতে হলে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চাই।
তিনি বলেন, দেশে যদি কেউ মডারেট ইসলাম কায়েম করতে চায়, সে বেইমান হয়ে যাব। দেশে কারো মনগড়া ইসলাম কায়েম করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী যারা লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে, তাদের প্রত্যাখান করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরে তিনি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন।