আকিমূল মাষ্টার/আহাম্মদ আলী: স্কুলছাত্র রকি’র মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চলছে নানা মুখী গুঞ্জন। সহায় সম্বলহীন রকি এমন কোন সম্পদের অধিকারী নয় যে কাহারো সাথে তার বিবাদ থাকতে পারে। সচেতন ও অভিজ্ঞ মহলের এমন আলোচনায় ঘুরে ফিরে আত্মহত্যার বিষয়টিও বোধগম্যের বাইরে থেকে যাচ্ছে। মা ফিরোজা বেগম পরের ক্ষেতে কাজ করে জীবনের একমাত্র সম্বল হিসাবে ছেলে রকি’কে বুকে নিয়ে শত কষ্টের মাঝে লেখাপড়া করাচ্ছিলো। কিন্তু সে স্বপ্নও আজ নিরাশার চোরাবালি ভেঙ্গে রকি চলে গেলো না ফেরার দেশে। নিঃসঙ্গ মায়ের আর এতটুকুও অবশিষ্ট আশা থাকলো না যার জন্যে অন্যের ক্ষেতে মা আজ মুজুরী খাটতে যাবে। রকি’র পরিবার ও এলাকা সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ২নং মধুহাটী ইউনিয়নের মামুনশিয়া গ্রামে বসবাসরত ফিরোজা বেগম দেড় বছর বয়সী শিশু রকি’কে নিয়ে বিগত ১৫/১৬ বছর আগে স্বামী তালাক প্রাপ্তা হয়ে মামুনশিয়া গ্রামে পিতার বাড়িতে চলে আসে। ছেলেকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে অনেকটাই এগিয়ে যাবার পর গত ১৪ অক্টোবর রকি আসছি বলে একটি বাইসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর রকি আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। পরদিন ১৫ অক্টোবর রকি’র দ্বি-খন্ডিত মরদেহ পাওয়া যায় চুয়াডাঙ্গা-মোমিনপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের মধ্যবর্তী ঘোড়ামারা ব্রীজের পাঁচপকেট নামক স্থানে। খবর পেয়ে রকি’র স্বজনেরা সেখানে উপস্থিত হয়ে রকি’র লাশ সনাক্ত করে। রকি এবার ২০১৭ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিলো। সে ঝিনাইদহ সদরের সাগান্না ইউনিয়নের উত্তর নারায়নপুর মাধ্যঃ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো। তার ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি পাওয়া যায় মধুহাটী ইউনিয়নের ডুগডুগি বাজারের একটি চুলকাটা দোকানে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ফিরোজা বেগমের অবস্থা যেন বোবা বধীর। চারদিকে বেড়া দেওয়া শূন্য একটি ঘর। পড়ে আছে রকি’র বই খাতা আর কিছু পোশাক। এ সময় রকি সম্পর্কে জানতে চাইলেও রকি’র মা ফিরোজা বেগম কোন উত্তর দিতে পারেনি। কিছুক্ষন পর তার দু’টি চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ভাঙ্গা ভাঙ্গা সুরে বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করেনি, করতে পারেনা। এ ঘটনাকে ঘিরে ১৭ অক্টোবর উত্তর নারায়নপুর স্কুল কতৃপক্ষসহ স্থানীয় এলাকার সচেতন জনতা রকি হত্যার বিচার চাই মর্মে বিদ্যালয় এলাকার মহাসড়কে মানববন্ধন পালন করে। এরপর কথা হয় রকি’র মামা আছমত আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, গ্রামে আমাদের কোন শত্রু নেই। না আছে আমাদের কোন জায়গা জমি। এমতাবস্থায় কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে রকি’র লেখা পড়া জীবনে কিছু সম্পর্কের খবরা খবর। রকি মৃত্যুর পর তার পড়ার টেবিল থেকে পাওয়া যায় কাগজে লেখা কয়েক জনার নাম ও মোবাইল
নম্বর। তার মধ্যে একই সাথে লেখা পড়া করা অত্র বিদ্যালয় এলাকার ইয়াসমিন নামের এক বান্ধবী রয়েছে যার সাথে রকি’র দীর্ঘদিনের প্রেম সম্পর্ক ছিলো বলে জানা গেছে। একই সাথে প্রাইভেটও পড়তো। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী পদে কর্মরত সেলিম এর মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে রকি’র ব্যক্তিগত মোবাইল। হয়তো-বা তার মধ্যেও থাকতে পারে রকি ট্রাজেডির অনেক অজানা রহস্য। এ বিষয়ে ইয়াসমিনের সঙ্গে রকি’র কি সম্পর্ক ছিলো সে সম্পর্কে ইয়াসমিনের পিতা ইসলাম মিয়া জানান, আমার মেয়ের সঙ্গে রকি’র কোন ধরনের সম্পর্ক ছিলো বলে আমার জানা নেই। তবে একই সাথে লেখাপড়া ও প্রাইভেট পড়তো বলে জানি। এ নিয়ে অন্য একটি সূত্র জানায়, ইয়াসমিন রকিদের মাঝে দূর’সম্পর্কের আত্মীয়তার জের রয়েছে এবং ইয়াসমিনের কোন এক অজ্ঞাত ভাবীর বাসায় রকি ইয়াসমিনদের দেখা-সাক্ষাত চলতো বলেও রকি পরিবারের পক্ষ থেকে জানায়। এ বিষয়ে রকি পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আইনগত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।