ঝিনাইদহের সাঁতারু সোনিয়া রিও অলিম্পিকে

Sonia-Jhenidah

ঝিনাইদহ অফিস: অলিম্পিকের ৩১তম আসর ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে বাংলাদেশের হয়ে সাতারু হিসেবে অংশ নিচ্ছেন ঝিনাইদহের মেয়ে সোনিয়া আক্তার। সোনিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের পাশে ভুটিয়ারগাতি গ্রামে। ওই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই রক্ষণশীল। সোনিয়া গ্রামের একটি মাদ্রাসায় আলিম পড়তেন। সোনিয়া আক্তার ঝিনাইদহ শহরের হাটখোলা বাজারে এক সময়ের পান বিক্রেতা আনিসুর রহমানের মেয়ে। মেয়ের কারণে ভাগ্য বদলেছে বাবা আনিসের। সেই হাটখোলা বাজারে পানের পরিবর্তে এখন বড় মুদি দোকান দিয়েছেন সোনিয়ার বাবা আনিসুর রহমান। বাড়িতে উঠেছে পাকা ঘর। দুঃখ ঘুচেছে পরিবারটির। দারিদ্র্য আর বাধার প্রচির ডিঙ্গিয়ে ঝিনাইদহের মেয়ে এখন রিও ডি জেনিরোতে। অলিম্পিকে চান্স পাওয়ার খবরটি সোনিয়া প্রথম শোনেন গ্রামের বাড়িতে গত ঈদের ছুটি কাটাতে এসে।  বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিড়া আসর অলিম্পিকের পুলে সাঁতরাবেন সোনিয়া। কিন্তু অলিম্পিকটা আসলে কী সেটি বুঝতেন না ক্যারিয়ারের শুরতে। সাঁতারে সোনিয়ার আদর্শ ডলি আক্তার। তিনবারের অলিম্পিয়ান ডলি আক্তারের সুবাদেই প্রথম অলিম্পিক শব্দের সঙ্গে পরিচয় সোনিয়ার। তিনি জানান, ‘আমি ডলি আপুর ভীষণ ভক্ত। আনসারে সাঁতরানোর সময় ডলি আপু আমাকে শুধু অলিম্পিকের গল্প শোনাতেন। এসব শুনে নিজেকে নিজে বলতাম, একদিন আমিও অলিম্পিকে সাঁতরাব।’ তবে টেলিভিশনে গত লন্ডন অলিম্পিকে সতীর্থ সাতারু মাহফিজুর রহমানকে দেখে আগ্রহটা বেড়ে যায় ভীষন ভাবে ভীষণ। অবশেষে সোনিয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়। সোনিয়ার মূল ইভেন্ট ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইল, আর তাতে তাঁর ক্যারিয়ার-সেরা টাইমিং ৩০.৮৬ সেকেন্ড। যেটি করেছেন গত বছর রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। ব্রাজিলে নিজের সেরা টাইমিং করতে চান সোনিয়া, ‘যেভাবে অনুশীলন করছি তাতে আশা করি নিজের আগের সেরা টাইমিং টপকে যেতে পারব।’ বাড়ির পাশে নবগঙ্গা নদী। চাইলে সেখানে সাঁতরাতে পারতেন সোনিয়া কিন্তু সাঁতার শেখার শুরুতে অনুশীলনের জন্য ছুটে যেতেন মাইল খানেক দূর ধুপাঘাটা ব্রিজের কাছে। বড় ভাই সাঁতার শিখতেন ‘জাহিদ স্যারের’ কাছে। ছোট বোন সোনিয়া বায়না ধরেন সাঁতার শেখার। বায়না মেটাতে ভাই বোনকে নিয়ে যান কোচের কাছে। ২০০৩ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডের হয়ে বয়স ভিত্তিক সাঁতার দিয়ে শুরু সোনিয়ার ক্যারিয়ার। জুনিয়ার ভিত্তিক সাঁতারে ২০০৬ সালে জেতেন ১১টি সোনা, ২টি ব্রোঞ্জ। আর ২০১০ সালে ১১টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে ১০টিতেই জেতেন সোনা। এর মধ্যে ৯টিতে ছিল জাতীয় রেকর্ড। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে এমন সাফল্যই তাঁকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।  তিনি বাংলাদেশ আনসারের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, এ বছর স্থায়ী চাকরী হয়েছে নৌবাহিনীতে। সোনিয়া প্রথম আর্ন্তজাতিক খেলায় অংশ নেন সিঙ্গাপুরে ২০১০ যুব অলিম্পিক গেমসে, ২০১১-তে যুক্তরাজ্যের আইল অব ম্যানে অংশ নেন কমনয়েলথ যুব গেমসে। এরপর সাঁতরেছেন ২০১৪ কাতার বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১৫ কাজান বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। বিশ্ব ফুটবলের বড় তারকা ব্রাজিলিয়ান নেইমারকে ভীষণ পছন্দ সোনিয়ার। আর সেই নেইমারের দেশে অলিম্পিকে যাওয়ায় রোমাঞ্চে রাতের ঘুমই যেন চলে গেছে সোনিয়ার।