
জীবননগর অফিস:
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছিন্নমূল, অনগ্রসর, এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক উন্নয়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জীবননগর উপজেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ‘ঊষা বাংলাদেশ’ এনজিও হিসেবে নির্বাচিত হয়। তবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানা অনিয়মের মধ্যদিয়ে তারা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জীবননগর উপজেলায় ৪টি ব্যাচে ১২০ জন প্রশিক্ষণার্থী ৩ মাস মেয়াদী মোটরসাইকেল সার্ভিসিং, প্যান্ট বিন পাইপ ফিটিং, ইলেকট্রিক্যাল হাউজ বাইনিং এবং মেশেনারি ও রড ব্যানডিং কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সরকারি নিয়মানুযায়ী ৩ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে বিশেষ করে মোরসাইকেল সার্ভিসিং কোর্সে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তাদের একটি হাতুড়ি, একটি স্কু-ড্রাইভার (স্টার), একটি স্কু-ড্রাইভার (মাইনাস), পানচ এক সেট, জার, হ্যাক স্কেম, ফাইল ব্রাইট, রেন্চ, ওয়েল ক্যান, ব্যাটারি চার্জারসহ ১৫ হাজার টাকা মূল্যেও যন্ত্রপাতি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘ঊষা বাংলাদেশ’ যেসব মালামাল দিচ্ছে, তার বাজার মূল্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। তাছাড়া এসব যন্ত্রপাতি নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণাথীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার টাকা করে।
‘ঊষা বাংলাদেশ’ এনজিওর প্রশিক্ষণ নেওয়া দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের রায়হান বলেন, ‘ঊষা বাংলাদেশের মাধ্যমে আমরা ৩০ জন ছেলে মোটরাসাইকেল সার্ভিসিং-এর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। আমাদের অনেকদিন আগে প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। তবে আমরা প্রশিক্ষণ শেষে জিনিসপত্র ঠিক মতো পাইনি। ঊষা বাংলাদেশের অফিসে ৩ হাজার টাকা জমা দেওয়ার পরে তারা আমাদের হাতে জিনিসপত্র দিয়েছে। তবে যে যন্ত্রপাতি দিয়েছে, তা একেবারে নিম্নমানের। ৩০ জনের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ টাকা দিতে রাজি হয়নি, সে কারণে তাদের কোনো জিনিসপত্র দেওয়া হয়নি। অনেকে রাগ করে জিনিসপত্র নেয়নি।’ একই অভিযোগ করেন জীবননগর পৌর শহরের মিরাজ আলী।
এ বিষয়ে ‘ঊষা বাংলাদেশ’ এনজিওর নির্বাহী পরিচালক দিলীপ কুমার পোদ্দার বলেন, ‘সরকার যে নিয়ম বেধে দেয়, আমরা সেই নিয়মে কাজ করি। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের নিকট থেকে ৩ হাজার টাকা জমা রেখে তাদের হাতে যন্ত্রপাতি দেওয়ার কথা। যেসব যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো সরকারিভাবে টেন্ডারের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আমাদের দিয়েছে। আমরা যেসব মালামাল প্রশিক্ষণাথীদের হাতে তুলে দিচ্ছি, এই মালামাল নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলেছে। আসলে আমরা নিজ থেকে কোনো কিছু ক্রয় করে দিচ্ছি না। সব দিচ্ছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এখানে আমরা কোনো অনিয়ম করিনি।’
জীবননগর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. জাকির উদ্দিন মোড়ল বলেন, ‘ঊষা বাংলাদেশের বাস্তবায়নে কিছু প্রশিক্ষণের কার্যক্রম ছিল। প্রশিক্ষণ শেষ হলেও তারা নাকি প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে যন্ত্রপাতি দেয়নি, এমন একটা অভিযোগ আমরা শুনছিলাম। এ বিষয়ে ঊষা বাংলাদেশে যিনি দায়িত্বে আছেন, আমি তার সাথে কথা বলেছি। তিনি বলছেন, তারা মালামাল দিচ্ছেন। তবে অনিয়ম করার বিষয় যে অভিযোগ এসেছে, এটা আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’