সাজ্জাদ হোসেন : বাংলাদেশ গ্র“প থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের, এ মাটি মানবতার’ শীর্ষক জাতীয় নাট্যোৎসবে গতকাল সন্ধ্যায় দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটারের নাটক ‘জিষ্ণু যারা’ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়িত হয়েছে। নাটক শেষে উপস্থিত দর্শকবৃন্দ তুমুল করতালির মাধ্যমে নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। এসময় আয়োজনের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর বলেন, ‘আমি অভিভূত অনির্বাণ থিয়েটারের নাটক দেখে, আশির দশক থেকেই আমি অনির্বাণ সম্পর্কে জানি। একটি মফস্বল শহরের দল অনির্বাণের যে সাংস্কৃতিক সাধনা-তা ঢাকার অনেক দলগুলির কাছে অনুকরণীয় হতে পারে’। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় মহিষের গায়ের মত কালো কুঁচকুঁচে রাতে ঘটে নারকীয় তান্ডব। খুন হয় মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মাঝির বিধবা কন্যা ফুলি। মানুষ সন্দেহের আঙুল তোলে দেশদ্রোহী রাজাকার খন্দকার পরিবারের দিকে। ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে থানায় মামলা দায়ের করেন ফুলির বাবা। পুলিশ রাজনৈতিক ডামাডোলে মামলাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য অপতৎপরতা শুরু করে। নিজ ছেলেকে রক্ষায় ধুর্ত খন্দকার বিষয়টি লোকচক্ষু থেকে আড়াল করে মানুষের মনযোগ ভিন্ন দিকে সরাবার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে এবং তার পক্ষের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে পুনঃবার নির্বাচনে জেতাবার নিশ্চয়তায় সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রামে নিয়ে আসেন। গ্রামে মন্ত্রী আগমনের খবরে মানুষের উৎফুল্লুতায় ফুলি হত্যার ঘটনা চাপা পড়ে যায়। স্বার্থের প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারের সহঅবস্থান একাকার হয়ে যায়। তারপরেও কোন কোন মুক্তিযোদ্ধা নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করেই আপোষহীনভাবে জীবন যাপন করে টিকে থাকে। দেশে যখন রাজাকারের বিচার হচ্ছে, তখন একজন রাজাকারের সন্তানের স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধার কন্যার প্রতি নিষ্ঠুরতা, তাকে হত্যা করার সকল আলামত দিনের আলোর মত স্বচ্ছ। অথচ ক্ষমতা বলয়ের কাছে তারা পরাজিত। এমন পরিস্থিতিতে ফুলির অত্যন্ত øেহের যাত্রাশিল্পী এক যুবক জনসম্মুখে এর শোধ নেওয়ার পরিকল্পনা আটে। খন্দকার বাড়ির চৌহদ্দিতে যাত্রাগানের আয়োজন করা হয় এবং যাত্রার মঞ্চেই ধর্ষক ও হত্যাকারী খন্দকারের বখাটে ছেলের শিরোচ্ছেদ করে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাহাবুবুর রহমান মুকুল, শামীম আজাদ, মিরাজ উদ্দিন, হাসমত কবির, সাজ্জাদ হোসেন, জগন্নাথ কুমার কর্মকার, আজাদুল ইসলাম মিলন, ফরহাদ হোসেন টিটন, জেসমিন আক্তার পপি, এস.এম.সাব্বির আলিম, হাবিবুর রহমান ঈদু, আব্দুল্লাহ্ আল ফয়সাল অপু, সাবিনা ইয়াছমিন লাকী এবং ফাতেমা খাতুন জেমি। নেপথ্যে কাজ করেছেন আলোক পরিকল্পনায়-আবুল হোসেন, আলোক নিয়ন্ত্রণে-রেজাউল করিম, পোষাক পরিকল্পনায়-রানী শাহ্ ও জেসমিন আক্তার পপি, উপকরণে-মিরাজ উদ্দিন, আবহ সংগীতে-ইসরাইল হোসেন খান, বাদ্যযন্ত্রে-সায়েমুল হক টিপু, মামুন আল রাজী, আব্দুর রহমান এবং খাইরুল ইসলাম। নাটকটির রচনা, নির্দেশনা ও মঞ্চপরিকল্পনা করেছেন আনোয়ার হোসেন।