নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত। প্রতিটি শিশু আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক এই কামনা আমাদের সকলের। প্রত্যেক অভিভাবকের প্রত্যাশা তার শিশুটি যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। অভিভাবকেরা তাদের শিশুটিকে এই যোগ্য করে গড়ে তুলতে গিয়ে ইদানিং শুরু হয়েছে শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে পারস্পরিক এক ধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। কার শিশু কত মুখস্ত করতে পারে কয়টা এ্যাসাইনমেন্ট স্কুলে জমা দিচ্ছে ইত্যাদি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বাংলা ৩টি, ইংরেজী ৩টি এবং গণিতে ২টি বই, এছাড়াও ১টি ড্রইং, ১টি সাধারণ জ্ঞান ও ১টি ধর্ম শিক্ষার বই সব মিলিয়ে ১১টি বই কিন্ডার গার্টেনে পড়–য়া সাড়ে তিন বছরের একটি শিশু শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ। শুধু ১১টি বই দিয়েই শেষ নয়, রয়েছে পৃথক ক্লাস, এ্যাসাইনমেন্ট ও টেষ্ট পরীক্ষা। চুয়াডাঙ্গার কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে পে¬-গ্র“পের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয় এই সিলেবাস ও রুটিনে। পরবর্তী ধাপ নার্সারি এবং কে.জি. শ্রেনীতে বেড়ে যায় আরও ২/৩টি বই। কোন কোন কিন্ডার গার্টেনে কে.জি.-১, কে.জি.-২ আবার দুটি ধাপে বিভক্ত। এভাবে একটি শিশু শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তির পূর্বে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে চারটি ধাপ পার করে আসতে হয়। সিলেবাস বড় করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুধু রাজধানীতেই নয় চুয়াডাঙ্গার বাইরে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত স্কুলগুলিতেও এখন বিরাজমান। কিন্তু এসব নৈরাজ্য দেখভালে সরকারী কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ফলে শিক্ষার নামে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী মহলের এ ধরনের অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। আর ক্ষতির শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশিরভাগ বইয়ের গায়ে অস্বাভাবিক মূল্য লেখা থাকে। অসাধু লাইব্রেরী মালিকেরা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে থাকেন বই নির্বাচনের বিনিময়ে। কোমলমতি শিশুদের সক্ষমতার কথা বিবেচনা না করেই নিজেদের মনগড়া সিলেবাস তৈরি করছে স্কুলগুলো। শিশুদের ঘাড়ে অযাচিতভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয় একগুচ্ছ বইয়ের ঝুলি। পড়াশুনা কি?-একথা বুঝে ওঠার আগেই অপরিণত বয়সে একটি শিশুকে এ অমানুষিক চাপ সইতে এক প্রকার বাধ্য করা হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক এই ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীর সাথে কথা বললে তাঁরা বলেন, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা প্রয়োজন। শিক্ষা সংশি¬ষ্ট বিভাগের উচিৎ হবে যত দ্রুত সম্ভব এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে কোমলমতি শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান দেওয়া।