রুদ্র রাসেল:
সারা দেশের ন্যায় করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলাজুড়ে। প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সম্প্রতি করোনাভারাসে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় মৃত্যু ও শনাক্তের হারও বেশ উদ্বেগজনক। যার কারণেই করোনা থেকে মুক্তি পেতে টিকার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় অর্থাৎ গত বছরেও টিকাগ্রহণে মানুষের এই আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। ছিলো এর ঠিক উল্টো দৃশ্য। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আসার পরেই এই ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে আতঙ্কিত মানুষ সব কাজ ফেলে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই ভ্যাকসিন নিতে চাইছেন। টিকা নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর আবারও দেশব্যাপী চীনের দেওয়া সিনোফার্মের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল থেকে আবারও চুয়াডাঙ্গাতে টিকাদান শুরু হয়েছে। পূর্বে রেজিস্ট্রেশনকৃতরা পর্যায়ক্রমে এই টিকা গ্রহণ শুরুও করেছেন। কার্যক্রমের প্রথম দিনেই দেখা গেছে টিকা নিতে আসা অধিকাংশই মানুষ মানছেন না কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি। আর এতেই জেলাজুড়ে গোষ্ঠী সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুয়ায়ী প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। আর এটা সবাই জেনেও সকাল নয়টার অনেক আগেই টিকাদান কেন্দ্রের সামনে এসে ভিড় জমান। আর এই ভিড়ের মধ্যে রীতিমত শিকেয় উঠতে দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক-শারীরিক দূরত্ব। টিকাদান কেন্দ্রগুলোই যেন এখন গোষ্ঠী সংক্রমণের আখড়া। টিকা দিয়ে করোনা থেকে রক্ষা পেতে আসা মানুষেরাই এই ভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণ কয়েকগুন বৃদ্ধি করে যাচ্ছে শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে। টিকা নিতে আসা মানুষজন মনে করছেন, ঠেলাঠেলি করে আগে টিকা নিলেই মুক্তি মিলবে করোনা থেকে। অথচ টিকা নেওয়ার পরেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অহরহ রেকর্ড রয়েছে। তাই টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া আহ্বান জানিয়েছেন জেলার সচেতন মহল।
জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় সিনোফার্মের টিকাদান কার্যক্রমের ৩২ তম দিনে টিকা গ্রহণ করেছে ৬৪১ জন। এর মধ্যে ৩৩২ জন পুরুষ ও ৩০৯ জন নারী। এনিয়ে জেলায় মোট সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করলেন ১৭৪৪ জন।
টিকা নিতে আসা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ ভিড় দেখে আমি আতঙ্কিত হয়েছি। এই ভিড় উপেক্ষা করে ভ্যাকসিন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো কিনা জানি না। তবে করোনা থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিন নিতে এসে করোনাতেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল।’
সনোয়ার হোসেন নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর এই প্রথম এতো ভিড়ের মধ্যে পড়তে হলো। মোবাইলে কাউকে কল দিলে কলার টিউনে করোনা বিষয়ক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে। অথচ টিকাদান কেন্দ্রে সেই সব নিয়মের কিছুই মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিভাগ একেবারেই উদাসীন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার অনুরোধ এভাবে টিকা কেন্দ্রে ভিড় তৈরি করে মহামারি আরও ছড়িয়ে না দিয়ে সরকারের মাধ্যমে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হোক।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলায় বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে একযোগে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৭১ জন। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় জেলায় করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান কার্যক্রম। ৮ এপ্রিল থেকে ২০ মে পর্যন্ত জেলায় করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৩১ হাজার ১০৪ জন। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে অপেক্ষায় আছেন ২৬ হাজার ৭৬৭ জন। গত ২০ মে করোনা টিকার মজুদ শেষ হওয়ায় জেলায় টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপূর্বে গত ২৫ এপ্রিল বন্ধ করে দেওয়া হয় করোনা টিকার প্রথম ডোজ প্রদানের কার্যক্রম। আর অনলাইনে করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা হয়েছে গত এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে। সেই থেকে গত ৬ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ছিলো চুয়াডাঙ্গায় টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। তবে ৭ জুলাই থেকে জেলায় টিকার রেজিস্ট্রেশন ওয়েবসাইট আবার খুলে দেওয়ায় টিকা নিতে হাজারের অধিক মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) টিকা নেওয়ার তারিখ নিশ্চিত হয়ে সকাল থেকেই হামলে পরে টিকা কেন্দ্রে। এদিকে টিকা কেন্দ্রে স্বাস্থবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো তদারকি না থাকায় কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা করোনা টিকাদান কমিটির আহ্বায়ক ও সিভিল সার্জন অফিসের (এমওডিসি) ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিনের যোগান না থাকার কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সবাই চাইছেন ভ্যাকসিন নিতে। ভ্যাকটিস রেজিস্ট্রেশনের অনলাইস সাইট খুলে দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজারের অধিক মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছে। ফলে ভিড় হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। তবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে প্রত্যেক মানুষকেই সচেতন হতে হবে।’