চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গে একজনের মৃত্যু

সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৪৭৬

জেলায় আক্রান্ত আরও ১৩ জন, মেহেরপুরে নতুন শনাক্ত ৫
সমীকরণ প্রতিবেদন:
সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৪৭৬ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৭৩৩ জনে। মোট শনাক্ত ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫২০ জনে দাঁড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৩৭২ জন এবং এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৪৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও জানানো হয়, ৯৪টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৮৫০টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১২ হাজার ৯৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মোস্তফা হোসেন (৪৭) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মেহেরপুর জেলায় নতুন করে আরও ৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৫৯ জন। গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে মোস্তফা হোসেন (৪৭) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জেলায় গতকাল নতুন ২১ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ১০৪১ জন সুস্থ হয়েছেন। নতুন শনাক্ত ১৩ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৬ জন, দামুড়হুদা উপজেলা ৪ জন ও জীবননগর উপজেলার ৩ জন রয়েছেন। ১৩ জনের মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। বয়স ২২ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে।
জানা যায়, গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে নিহত মোস্তফা হোসেন দীর্ঘদিন যাবত জ্বর, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। গতকাল অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা বেলা দেড়টার দিকে মোস্তফাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেন। এ সময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরব হোসেন তাঁকে হাসপাতালের ইয়োলো জোনে ভর্তি রাখেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। মোস্তফা হোসেন দীর্ঘদিন যাবত করোনা উপসর্গ জ্বর, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন রোগে আক্রান্ত থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর শরীর থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে। করোনা উপসর্গ নিয়ে নিহত মোস্তফা হোসেন আলমডাঙ্গা উপজেলার গকুলখালী গ্রামের মোজাফ্ফার হোসেনের ছেলে।
এদিকে, গত শনিবার করোনা আক্রান্ত সন্দেহে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৬০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে পাঠায়। গতকাল উক্ত নমুনার মধ্যে ৬০টি নমুনার মধ্যে ৫৩টি নমুনার ফলাফল সিভিল সার্জন অফিসে এসে পৌঁছায়। এর মধ্যে ১৩টি নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ ও বাকি ৪০টি নমুনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। গতকাল করোনা আক্রান্ত সন্দেহে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৩৯টি নমুনা সংগ্রহ করেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা থেকে সংগৃহীত ৩৯টি নমুনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির জানান, চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার মোস্তফা হোসেন নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত করোনা উপসর্গ জ্বর, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেন। করোনা উপসর্গ থাকায় তাঁকে হাসপাতালের ইয়োলো জোনে ভর্তি রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। করোনা উপসর্গ থাকায় করোনা পরীক্ষার জন্য নিহতের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা প্রটোকলে লাশের দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় নতুন আক্রান্ত ১৩ জনই হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। তাঁদের সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে হোম আইসোলেশন অথবা প্রতিষ্ঠানিক আইসোলেশন নিশ্চিত করা হবে। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ৫ হাজার ৩৫২টি, প্রাপ্ত ফলাফল ৫ হাজার ২০১টি, পজিটিভ ১ হাজার ৩৫৯টি ও নেগেটিভ ৩ হাজার ৮৪২টি। গতকাল নতুন ২১ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪১ জন ও মৃত্যু ৩১ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলায় গতকাল হোম আইসোলেশনে ছিলেন ২৫৫ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন ২০ জন।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত ১৯ জন মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং চুয়াডাঙ্গায় হোম আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গার বাইরে স্থানান্তর হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪ জনের। সব মিলিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় করোনা আক্রান্ত নুরুল আহাদের (৬০)। নুরুল আহাদ দীর্ঘদিন যাবত করোনা উপসর্গ জ্বর, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। গত ২৯ আগস্ট তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ৩০ আগস্ট চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নুরুল আহাদ করোনা আক্রান্ত নিশ্চিত করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়।
মেহেরপুর:
মেহেরপুর জেলায় নতুন করে আরও ৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হেেয়ছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস সন্দেহে পরীক্ষার জন্য যে নমুনা পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে আরও ২৫ জনের রিপোর্ট এসেছে। প্রাপ্ত রিপোর্ট থেকে জেলায় করোনা সংক্রমিত ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আক্রান্ত সবাই গাংনী উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে মেহেরপুর জেলায় সরকারিভাবে বর্তমানে ৪৫ জনের করোনা পজিটিভ রয়েছে। ৪৮১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫ জন।