ইপেপার । আজ শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

এক দিনে একই পরিবারের চারজনসহ ভর্তি ৫০

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪
  • / ৫৭ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল রোববার হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে একই পরিবারের চারজনসহ চিকিৎসাধীন ছিলেন নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে মোট ৫১ জন রোগী। এই ওয়ার্ডে একজন মাত্র সিনিয়র স্টাফ নার্স ভর্তি রোগীদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করেন। এতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয় কর্তব্যরতদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে মোট ১৪৫ জন রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ জনই শিশু। এছাড়াও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ রোগী ভর্তি হয়েছেন ২০ জন ও ২৫ জন নারী। খাতা-কলমে হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড না থাকলেও বণিক সমিতির অর্থায়নে এই ওয়ার্ডটির পরিচালনা করে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল রোববার সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিচতলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, পাঁচটি শয্যাসহ ফ্লোরে বিছানা পেতে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সেবা দিচ্ছেন একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও একজন মাত্র আয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্তব্যরত ওই স্টাফ নার্স বলেন, ‘কখনো কখনো ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ কম থাকে। সে মময় রোগীদের চিকিৎসা দিতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। তবে হঠাৎ করেই রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেলে একজন নার্সের জন্য এত রোগীকে সেবা দিতে অসুবিধায় পড়তে হয়। আজ (গতকাল) একইসঙ্গে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৫১ জন চিকিৎসাধীন আছে। রাত পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। একার পক্ষে এত রোগীকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সেবা দেয়া কষ্টকর। রোগীর স্বজনরাও চিকিৎসা পেতে তাড়াহুড়ো করেন। এসময় আরও একজন নার্স এই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকলে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া সম্ভব হতো।’

এদিকে, গতকাল বেলা সাড়ে ছয়টার দিকে ডায়রিয়া আক্রান্ত একই পরিবারের চারজন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন শিশু। আক্রান্তরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের কবরস্থানপাড়ার আলফাজ উদ্দীনের ছেলে ফারুক উদ্দীন (৩০), তার স্ত্রী সাথী খাতুন (২১) ও তাদের দুই শিশু সন্তান জুনাইদ (১) ও জান্নাতুল (৬)।

ডায়রিয়া আক্রান্ত ফারুক উদ্দীন বলেন, গত শনিবার ভোর থেকে তাদের পরিবারের চারজনই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সকাল পর্যন্তও সুস্থ না হলে ডিঙ্গেদহ বাজরে রফি উদ্দীন নামের এক চিকিৎসকের নিকট থেকে চিকিৎসা নেন তারা। তবে শনিবার সারাদিন ও গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত রফি উদ্দীনের চিকিৎসায় তাদের কেউই সুস্থ না হলে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সাথী খাতুন বলেন, শনিবার রাতে তার রান্না করা খাবার খেয়েছিলেন দুই শিশুসহ বাড়ির সকলে। ভোর থেকে দুই সন্তানসহ তারা চারজনই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, বেলা সাড়ে ছয়টার দিকে দুই শিশুসহ একই পরিবারের ডায়রিয়া আক্রান্ত চারজন জরুরি বিভাগে আসে। এসময় তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ফুড পয়জেনিং থেকে তারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা পেলে তারা সুস্থ হয়ে উঠবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, সদর হাসপাতালের খাতাপত্রে ডায়রিয়া ওয়ার্ড না থাকলেও রোগীদের স্বার্থে ওয়ার্ডটি চলমান রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা বণিক সমিতির অর্থায়নে ও হাসপাতালের জনবলে ওয়ার্ডটি পরিচালনা করা হয়। ওয়ার্ডে কলেরা স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সাপ্লাই আছে। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই এই ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বাড়ে, সে সময় চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

এক দিনে একই পরিবারের চারজনসহ ভর্তি ৫০

আপলোড টাইম : ০৪:৪৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল রোববার হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে একই পরিবারের চারজনসহ চিকিৎসাধীন ছিলেন নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে মোট ৫১ জন রোগী। এই ওয়ার্ডে একজন মাত্র সিনিয়র স্টাফ নার্স ভর্তি রোগীদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করেন। এতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয় কর্তব্যরতদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে মোট ১৪৫ জন রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ জনই শিশু। এছাড়াও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ রোগী ভর্তি হয়েছেন ২০ জন ও ২৫ জন নারী। খাতা-কলমে হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড না থাকলেও বণিক সমিতির অর্থায়নে এই ওয়ার্ডটির পরিচালনা করে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল রোববার সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিচতলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, পাঁচটি শয্যাসহ ফ্লোরে বিছানা পেতে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সেবা দিচ্ছেন একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও একজন মাত্র আয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্তব্যরত ওই স্টাফ নার্স বলেন, ‘কখনো কখনো ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ কম থাকে। সে মময় রোগীদের চিকিৎসা দিতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। তবে হঠাৎ করেই রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেলে একজন নার্সের জন্য এত রোগীকে সেবা দিতে অসুবিধায় পড়তে হয়। আজ (গতকাল) একইসঙ্গে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৫১ জন চিকিৎসাধীন আছে। রাত পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। একার পক্ষে এত রোগীকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সেবা দেয়া কষ্টকর। রোগীর স্বজনরাও চিকিৎসা পেতে তাড়াহুড়ো করেন। এসময় আরও একজন নার্স এই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকলে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া সম্ভব হতো।’

এদিকে, গতকাল বেলা সাড়ে ছয়টার দিকে ডায়রিয়া আক্রান্ত একই পরিবারের চারজন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন শিশু। আক্রান্তরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের কবরস্থানপাড়ার আলফাজ উদ্দীনের ছেলে ফারুক উদ্দীন (৩০), তার স্ত্রী সাথী খাতুন (২১) ও তাদের দুই শিশু সন্তান জুনাইদ (১) ও জান্নাতুল (৬)।

ডায়রিয়া আক্রান্ত ফারুক উদ্দীন বলেন, গত শনিবার ভোর থেকে তাদের পরিবারের চারজনই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সকাল পর্যন্তও সুস্থ না হলে ডিঙ্গেদহ বাজরে রফি উদ্দীন নামের এক চিকিৎসকের নিকট থেকে চিকিৎসা নেন তারা। তবে শনিবার সারাদিন ও গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত রফি উদ্দীনের চিকিৎসায় তাদের কেউই সুস্থ না হলে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সাথী খাতুন বলেন, শনিবার রাতে তার রান্না করা খাবার খেয়েছিলেন দুই শিশুসহ বাড়ির সকলে। ভোর থেকে দুই সন্তানসহ তারা চারজনই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, বেলা সাড়ে ছয়টার দিকে দুই শিশুসহ একই পরিবারের ডায়রিয়া আক্রান্ত চারজন জরুরি বিভাগে আসে। এসময় তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ফুড পয়জেনিং থেকে তারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা পেলে তারা সুস্থ হয়ে উঠবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, সদর হাসপাতালের খাতাপত্রে ডায়রিয়া ওয়ার্ড না থাকলেও রোগীদের স্বার্থে ওয়ার্ডটি চলমান রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা বণিক সমিতির অর্থায়নে ও হাসপাতালের জনবলে ওয়ার্ডটি পরিচালনা করা হয়। ওয়ার্ডে কলেরা স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সাপ্লাই আছে। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই এই ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বাড়ে, সে সময় চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়।