চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুলিশের কর্মবিরতি ঘোষণা
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় আনসার সদস্যরা
- আপলোড টাইম : ১০:০১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪
- / ৪৯ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন অধস্তন পুলিশ সদস্যরা। ‘বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী’ ব্যানারে পুলিশের একটি অংশ গতকাল বুধবার দুপুরের পর ১১ দফা দাবি তুলে ধরে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। এসব জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে সরে এসে পুলিশ লাইন্সে তাদের দাবির সর্মথনে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পুলিশ সদস্যদের একটি অংশের কর্মবিরতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গা সোনালী ব্যাংক ও পুলিশের নিজস্ব স্থাপনা ছাড়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্যদের দেখা গেছে। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। সরকার পতনের এই আন্দোলনে অসংখ্য ছাত্র-জনতাসহ নিহত হন পুলিশ সদস্য। এ অবস্থায় গত ৬ আগস্ট কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী’ ব্যানারে পুলিশের একটি অংশ। গতকাল ওই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে নিহত পুলিশ সদস্যদের হত্যার বিচারসহ ১১ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করে চুয়াডাঙ্গার অধস্তন পুলিশ সদস্যরা। কর্মবিরতিতে যাওয়ার আগে জেলা জজ, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, ট্রেজারিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে ফিরে যান এবং বিকেলে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইন্সে কর্মবিরতি ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
কর্মবিরতিতে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জনগণের কাছে পুলিশ সদস্যদের ভিলেন বানিয়ে ফেলেছে। তারা এই প্রথা থেকে বের হতে চান। পুলিশ জনগণের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে চায়। কোনো দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণের কাছে আর ভিলেন হতে চায় না। এ বিষয়ে জানতে জেলার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মেহেরপুর জেলার তিনটি পুলিশ স্টেশন সদর, গাংনী ও মুজিবনগর থানা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে আনসার সদস্যদের থানা ও ট্রাফিকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সদর দপ্তরের নির্দেশনা ও খুলনা রেঞ্জ দপ্তরের পরিকল্পনা অনুযায়ী জেলার তিনটি থানার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা রক্ষায় জেলা প্রসাশন ও পুলিশ সুপারের সাথে সমন্বয় করে ৩৬ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়ও সড়কের যানজট নিরসনে শহরের ব্যস্ততম মোড়গুলোতে ২৪ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে বলে জেলা কমান্ড্যান্ট প্রদীপ চন্দ্র দত্ত নিশ্চিত করেন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ মোতায়েন কার্যক্রম চলমান থাকবে।
জেলার সরকারি-বেসরকারি ২৪টি গার্ড/সংস্থার নিরাপত্তায় ১১৫ জন, মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলা কার্যালয়ের নিরাপত্তায় আরও ৫০ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েন রয়েছে। অধিকতর নিরাপত্তার জন্য টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
জেলা কমান্ড্যান্ট বলেন, জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সবসময় শ্রদ্ধাশীল। জনগণের পাশে থেকে জনবাহিনী হিসেবে এ বাহিনী সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। উল্লেখ্য, চলমান শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা কার্যক্রমে মেহেরপুর জেলায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৫০ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এছাড়াও ঝিনাইদহে ১১ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মবিরতি পালন করছেন জেলায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা। গতকাল সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনসে ১১ দফার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন পুলিশ লাইনসে কর্মরত তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য। এতে পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ পুলিশ কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দলের অধীনে কাজ করবে না, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের জনগণের সেবা তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে দাবি করেন তারা। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার, ৮ ঘণ্টা ডিউটি, ছুটি বৃদ্ধি, সোর্স মানি প্রদান, ঝুঁকি ভাতা, নিজ রেঞ্জে বদলিসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।