চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বের সংস্করণসহ দুই দফা দাবিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
আজ অবস্থান কর্মসূচি, দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
- আপলোড টাইম : ০১:০০:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৮ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বের সংস্করণের দাবি জানিয়েছে জেলার সাধারণ সংবাদকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রোববার বেলা তিনটায় জেলার সাধারণ সংবাদকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা দুই দফা দাবি জানিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। এসময় তারা প্রেসক্লাবে রাজনৈতিক প্রভাব সম্পৃক্তকরণ ও সাধারণ সংবাদকর্মীদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ জানিয়ে দুই দফা দাবি পেশ করেন। দুই দফা দাবিতে তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা ও যোগ্য যাদের প্রেসক্লাবে অন্তর্ভুক্তকরণ করা হয়নি, তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ও বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে।
আন্দোলনকারী গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষে জানানো হয়, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচনের পর নির্বাচিত কমিটি প্রেসক্লাবের সদস্য ব্যতীত সকল গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব জেলার সাধারণ সাংবাদিকদের অধিকার হরণ করে স্বার্থান্বেষীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। প্রকৃত সাংবাদিকদের বাইরে রেখে দলীয় প্রভাবের মাধ্যমে প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। সরাসরি রাজনীতি করে ও দলীয় সমর্থনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে প্রেসক্লাবের পদে আছেন। কেউ কেউ সরকারি চাকরি বা এমপিওভুক্ত চাকরি করেও প্রেসক্লাবের পদে আছেন। শুধু তাই নয়, প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র না মেনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর যোগ্য ব্যক্তিদের সদস্য পদ দেয়া থেকেও বিরত থেকেছে প্রভাবশালী কয়েকজন। প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রে স্থানীয় গণমাধ্যমের দুইজন করে প্রতিনিধিকে সহযোগী সদস্য করে অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। তবে অযোগ্যরা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনায়াশেই প্রেসক্লাবের সদস্য পদসহ গুরত্বপূর্ণ পদেও স্থান পেয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবকে নিরপেক্ষ করার জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনও গণমাধ্যমকর্মীদের এই আন্দোলনে সম্মতি জানিয়েছে। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার দাবি তাদেরও। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গার অন্যতম সমন্বয়ক সাফ্ফাতুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বের সংস্করণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী ভাইয়েরা সত্য প্রকাশে কাজ করেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আমরা দেখেছি যারা সত্য প্রকাশে কাজ করতে চেয়েছেন, তাদেকে বাঁধা দেয়া হয়েছে। প্রেসক্লাব থেকে আমাদের ন্যায্য দাবিতে সে সময় কোনো প্রকার সহযোগিতা করা হয়নি। ক্ষমতাসীন দল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রেসক্লাবে রাজনৈতিক প্রভাবের স্থান থাকায় প্রেসক্লাবের নেতৃস্থানীয় সংবাদকর্মীরা অন্য সাধারণ সংবাদ কর্মীদের কাজেও বাঁধা সৃষ্টি করেছে। আমরা চাই স্বচ্ছ প্রেসক্লাব, যেখানে সকলের সমঅধিকার থাকবে। সত্য প্রকাশে সংবাদকর্মীরা থাকবেন নির্ভীক। আমরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বের সংস্করণে যোগ্যদের স্থান দেয়া ও পূর্বের কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করাসহ দুই দফা দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা পরবর্তী বৃহৎ কর্মসূচি নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হবো।’
এদিকে, গণমাধ্যমকর্মীদের প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচির খবর পেয়ে সেখানে আসেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি। তিনি সাংবাদিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফও আসেন। তারা সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন।
তবে আন্দোলনরত গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে গতকাল রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিলো। তবে ওই আল্টিমেটাম মানেনি বর্তমান কমিটি। তাই দাবি মেনে না নেওয়ায় আজ সোমবার বৃহৎ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। ইতোমধ্যে এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার জৈষ্ঠ্য সাংবাদিকরাসহ উপজেলা পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন প্রেসক্লাব। তারাও সংহতি জানিয়ে এ আন্দোলনে থাকবেন। গণমাধ্যমকর্মীরা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে বৈষম্য নিরসনে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এই আন্দোলনে সরবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্দোলনে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গার গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে সাংবাদিক হুসাইন মালিক, মাহফুজ মামুন, সুস্থির আজাদ, আহসান আলম, সাঈফ জাহান, মেহেরাব্বিন সানভী, আলমগীর হোসেন, আজাদুল ইসলাম, সোহেল রানা ডালিম, রুদ্র রাসেল, এএইস কামরুল, বজলুল আলম জীবন, রবিউল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, সাকিবুর রহমান সাকিব, সাকিব আল হাসানসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।