
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। শীতের বিদায়লগ্নে আর ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য শিমুল ফুলের রঙিন পাপড়িতে নতুন সাজে সেজে ওঠে প্রকৃতি। ডালজুড়ে ফোটে থাকা শিমুল ফুলের স্বর্গীয় সৌন্দর্য জানান দেয় বসন্ত বুঝি এলো রে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় কালের বিবর্তনে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বসন্তের রূপকন্যা শিমুল ফুল বিলুপ্তপ্রায়। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে অনেক ফুল ফোটলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না রক্তলাল নয়নাভিরাম শিমুল ফুলের। বছর দশেক আগে জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে-কানাচে বা রাস্তার পাশে শিমুল গাছ দেখা গেলেও এখন ব্যাপক হারে কমে গেছে এ গাছটি। বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে-অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে ব্যাপকহারে নির্মাণকাজ, টুথপিকসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। তাই ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে গাছটি। আগামী ১০ বছর পর এ গাছটির নাম নাও জানতে পারে নতুন প্রজন্ম।
শিমুল গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের ওপরে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এ গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বকসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করত। এখন এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। গাছ না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে এসব পাখিও হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয় না কোনো যত্ন। অযত্ন আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফল পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা-আপনিই ফেটে যায়। এরপর তুলার সঙ্গে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়।
শিমুল গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব। প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করেন। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বোমবাক্স সাইবালিন’। এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কাণ্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সেই তুলনায় বেশ মোটাও হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে। শিমুল গাছ ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সৈকত হোসেন বলেন, এক সময় এ উপজেলায় ব্যাপক হারে শিমুলগাছ দেখা যেত। কিন্তু এখন তেমন একটা দেখা যায় না। অপরিকল্পিতভাবে কেটে ফেলার কারণে শিমুল গাছের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। জীবননগর উপজেলার মেহিদী হাসান বলেন, শিমুল গাছ কেটে ফেলার কারণে প্রকৃতি তার রূপ হারিয়ে ফেলছে, সৌন্দর্য যেন ভাটা পড়ছে। প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলতে আমাদের শিমুল গাছের চারা রোপণ করা উচিত।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, শিমুল এমন একটি গাছ যা কবিদের ও সাধারণ মানুষের রঙের প্রতীক। জায়গার প্রয়োজনে এ গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। নতুন করে না রোপণের ফলে আমরা বসন্তের সুষমা হারাচ্ছি। প্রাকৃতিকভাবে শিমুল গাছ থেকে তুলা পেয়ে থাকি। কিন্তু গাছ কমে যাওয়ায় আমরা কৃত্রিম তুলা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি।