
আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো জনগণের সেবা করা
সমীকরণ প্রতিবেদক:
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন‘ আমাদের একমাত্র লক্ষ্য জনগণের সেবা করা । এ অফিস জনগণের স্বার্থে। দূর-দূরান্ত থেকে যে সব বিচারপ্রার্থীরা আসেন তাদের বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা স্বচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবেন। দেশের সকল জেলায় সকল আদালত প্রাঙ্গনে ন্যায়কুঞ্জ স্থাপন করা হবে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে আগত বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিত বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর প্রধান বিচারপতি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপন করেন এবং বিচারকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় আপীল বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম, জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফর রহমান শিশির এবং জজকোর্ট ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকমণ্ডলী এবং কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরো বলেন, ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম। এজন্য সারাদেশে ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার । দেশের প্রতিটি আদালতে ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হবে। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ মন্ত্রণালয়ের কাজ। দেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৩৪ টি জেলায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হয়েছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে একনেকে পাশ হয়েছে। শিগগিরই চুয়াডাঙ্গায়ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ করা হবে । দেশের আদালতগুলোতে মামলাজট নিরসনে ৫ হাজার বিচারক দরকার। প্রতিবছর ১০০ জনের বেশি বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় বিচারক সংকট নিরসনে বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে। মামলা নিষ্পত্তি আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে, বিচারকের স্বল্পতার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। বিচারকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে অফিস টাইমে অফিসে বসবেন। বিচারকরা রাত পর্যন্ত কাজ করেন। তবে, কেউ যদি গাফিলতি করেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভায় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সঞ্চালনা করেন। সভায় আপীল বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম, জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুসরাত জেরীন, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফর রহমান শিশির বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। মতবিনিময় সভায় সরকারি কৌশুলি (জিপি) অ্যাড. খোকন, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বেলাল হোসেন, সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবীগণ বক্তব্য রাখেন। এসময় বিচারকবৃন্দ ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরো বলেন, যে যেখানে আছি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। বার যদি সহযোগীতা না করে বেঞ্চের কিছু করার আছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বারে সমস্যা হয়েছে, কিন্ত চুয়াডাঙ্গায় হয়নি। আইন বাউন্ডারি দিয়ে লিমিট করে দিয়েছে। মনপ্রাণ দিয়ে বেঞ্চকে সাহায্য করবেন। যাতে বিচারকরা সঠিক রায় দিতে পারেন। বিচারপ্রার্থীরা যদি বলেন, দীর্ঘদিনেও মামলার রায় হয়না, তিনি বলতে পারেন। বিচারপ্রার্থীরা যেন স্বল্প সময়ে বিচার পায়। যাতে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থাহীনতা না হয়।
এখানে বিচারক সংকটের বিষয়ে জানতাম না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচারক পাঠানো হবে। বিল্ডিংয়ের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী ও পূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানাবো। আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের বসার জায়গা নেই। তাদের জন্য টয়লেট নেই। মহিলাদের কষ্ট করতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি। তিনি একমত হয়েছেন। ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করেন। যেকোন সমস্যা বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমকে বলবেন। আমার যতটুকু করার আমি করবো। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের রাষ্ট্রকে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। একমাত্র পথ হচ্ছে, আমরা যে যেখানে আছি, নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। একাত্তরের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আমাদের দেশকে গতিশীল করতে হবে। জুডিশিয়ারিকে গতিশীল করতে হবে।’
শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গায় জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জুডিশিয়ারি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি। এই একটি অঙ্গ যদি দুর্বল হয়, তাহলে সে রাষ্ট্র কার্যকর থাকে না। জুডিশিয়ারি যদি ভারসাম্য না রাখতে পারে, তাহলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তির সংগ্রাম করেছিলাম, তা পূরণ হবে না।’ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম দিন থেকে প্রতিটা দিনই ছিল মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা থেকেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কুষ্টিয়ার সন্তান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাঁর নেতৃত্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদাহরণ রেখে যাবেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম বলেন, ‘আমরা জানি, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হলো আদালত। আদালতের গতিশীলতা যত বৃদ্ধি পাবে, আদালতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ততই প্রশংসিত হবেন। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করা অন্যতম শর্ত হচ্ছে বার-বেঞ্চের সম্পর্ক। আইনজীবী এবং আদালত কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। বিচারব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ আইনজীবী।