চুয়াডাঙ্গায় মোবাইল না পেয়ে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা!
প্রতিবেদক, হিজলগাড়ী:
মোবাইল আসক্তিই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বড়শলুয়া গ্রামের কলেজছাত্রী পলির। দরিদ্র পিতার কাছে দামি ফোনের আবদার করার পর সেটা না পেয়ে রাগে-অভিমানে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে এখন জীবন-মৃত্যুর সন্নিকটে পলি। অর্থাভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যহত হওয়ার পর কলেজছাত্রীর পাশে দাঁড়াল তার স্কুল ও কলেজের সহপাঠীরা। নিজেরা বিভিন্নভাবে সাহায্য তুলে বান্ধবীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তারা। এর আগে অর্থাভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে দরিদ্র কলেজছাত্রী পলি, তার সাহায্যে এগিয়ে আসুন। এমন আহ্বান জানিয়ে ‘চুয়াডাঙ্গা-বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে সর্বপ্রথম একটি লাইভ শেয়ার করা হয়। যার প্রেক্ষিতেই দরিদ্র পলির পাশে দাঁড়ান চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সমাজের বিত্তবানরা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বড়শলুয়া দাসপাড়ার আরজান আলীর মেয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী পলি খাতুন তাঁর পিতার কাছে একটি স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার দাবি জানায়। রাজমিস্ত্রি বাবা মোবাইল কিনে দিতে ব্যর্থ হলে কলেজছাত্রী পলি খাতুন গত ১৯ তারিখ রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ঘরের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করে। কিন্তু রাজমিস্ত্রি আরজানের পক্ষে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর মত অর্থ না থাকায় সদর হাসপাতাল থেকে ৩০ তারিখে বাসায় নিয়ে রাখে। আগুনে পলির শরীরের অধিকাংশ পুড়ে যাওয়া ও বিনা চিকিৎসায় তার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। বিষয়টি জানতে পারে তারই সহপাঠী হিজলগাড়ী বাজারপাড়ার ইউসুপ আলীর ছেলে নুরজেল ও মোস্তফার ছেলে শিলন, শাহীন আহম্মেদের ছেলে ইমন ও ছোটশলুয়া গ্রামের ছানাউল্লাহর ছেলে তুষার, তারা বিষয়টি নিয়ে হিজলগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি ২০১৭ সালেল ব্যাচের বন্ধু সার্কেলের সকলকে একত্রে করে কলেজ ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য অর্থ সহযোগিতার তুলতে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে হিজলগাড়ী, বলদিয়া, ছোটশলুয়া, বড়শলুয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নগদ অর্থ সহায়তা তুলতে থাকে। সেই দিনই সহপাঠিদের আর একপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কলেজছাত্রীর চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে সমাজের বিত্তবানদের কাছে আহ্বান জানিয়ে পোস্ট দেয়। সেই পোস্টে সাড়া দিয়ে তার চিকিৎসা সহযোগিতায় নগদ ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, চুয়াডাঙ্গা জেলার মানবিক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম কলেজ ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা ও চিকিৎসার সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এছাড়াও অনেক প্রবাসী, স্থানীয়রা সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। সব মিলিয়ে প্রথম দিনে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে গত ৩ তারিখে কলেজছাত্রীর উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা বার্ন ইউনিটে পাঠায়। বর্তমানে সে বার্ন ইউনিটের ১৭ নং বেডে চিকিৎসাধীন আছে।
এদিকে, কলেজ ছাত্রীর চিকিৎসার বিষয়ে পুলিশ সুপারের নিদের্শে সরেজমিনে কলেজছাত্রীর বাড়িতে যান দর্শনা থানার ওসি মাহাবুব রহমান কাজল। তিনিও সহযোগিতা করেন।