সমীকরণ প্রতিবেদন:
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ ঘণ্টায় প্রায় ১০২ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে উপকূলে আঘাত হানে। পরে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম শেষ করে গভীর নিম্নচাপ আকারে পটুয়াখালী ও এর আশপাশের জেলাগুলোর ওপরে অবস্থান করছে। গতকাল শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে বিকাল ৪টায় মিধিলি উপকূল অতিক্রম শেষ করে। এটি দুর্বল হয়ে উপকূলে আঘাত হানলেও টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে লন্ডভন্ড হয়ে যায় দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। মিধিলির প্রভাবে ভারী বর্ষণে মাটির ঘরের দেয়াল চাপায় কক্সবাজারের টেকনাফে একই পরিবারের চারজন এবং ঝোড়ো বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও টাঙ্গাইলের বাসাইলে দুইজন এবং গাছ উপড়ে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মিধিলির তান্ডবে লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা নদীর তীরে থাকা অর্ধশতাধিক ছোট নৌকা বিধ্বস্ত হয়েছে।
এ সময় ডুবে গেছে বেশ কয়েকটি নৌকা। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ গাছপালা উপড়ে গেছে, সারা দেশে বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকশ’ কাঁচা ঘরবাড়ি। খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে কয়েকটি জেলায়। এছাড়া একটানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে আধাপাকা আমন ধান ও শীতকালীন সবজি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যার আগে প্রবল বাতাসে নোঙর ছিঁড়ে চট্টগ্রামে তীরে উঠে পড়ে একটি লাইটারেজ জাহাজ। এছাড়া গভীর সমুদ্রবন্দরে মাছ ধরতে যাওয়া বরগুনার ২০টি ট্রলারসহ দুই শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মিধিলি উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকাল ৪টায় উপকূল অতিক্রম শেষ করে। ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে বর্তমানে পটুয়াখালী ও এর কাছাকাছি এলাকায় গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের ভেতরে আরও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে। মিধিলি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরের বিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার সকাল থেকেই সারা দেশে নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ শনিবার সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। অন্যদিকে, কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানী মোস্তফা কামাল পলাশ ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আপডেট ১৬-তে জানিয়েছেন, মিধিলি হঠাৎ করে প্রচন্ড শক্তিশালী হয়েছে বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সংযোগস্থলের ওপরে। ফলে এই তিন বিভাগের মিলিত স্থলের জেলাগুলোর ওপরে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কি.মি.-এর বেশি বেগে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার সারাদিন রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত ছিল। এতে রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বেশি দুর্ভোগে পড়েন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও জরুরি কাজে বাসার বাইরে আসা মানুষজন। এর মধ্যে রাজধানীর কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় সকালের দিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা যায় যানজট। শুক্রবার রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। তবে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।