ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরের ভূমি অধিগ্রহন শাখার কানুনগো সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৩২নং কুফাডাঙ্গা মৌজায় গ্রীড স্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহনে কানুনগো সিরাজুল ইসলাম জমির মালিকদের কাছ থেকে এক লাখে ১০হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করেন বলে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি সত্য বলেও কৃষকরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে। তারপরও অভিযুক্ত কানুনগো সিরাজুল ইসলাম বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ঝিনাইদহ জমি অধিগ্রহন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ওয়েষ্টার্ণ গ্রীড নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার ১৩২নং কুলফাডাঙ্গা মৌজায় ১৬ একর ৪০ শতক জমি অধিগ্রহন করা হয়। এজন্য এলাকার প্রায় ৩৫/৪০ জন কৃষদের ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। বেশির ভাগ কৃষক অভিযোগ করেছেন, জেলা প্রশাসকের ওয়েলফেয়ার ফান্ডের নামে কানুনগো সিরাজুল ইসলাম লাখে ১০ হাজার টাকা চেক প্রদানের আগেই হাতিয়ে নিয়েছেন। এ হিসেবে কানুনগো সিরাজুল আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই টাকা কি শুধু সিরাজুলের পকেটে উঠেছে ? প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ সত্য হওয়ার পরও কেন এখনও কানুনগোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না ? এমন হাজারো প্রশ্ন ভুক্তভোগি কৃষকদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। এদিকে টাকার শোকে এলাকার অনেক হতদরিদ্র কৃষক ভেঙ্গে পড়েছেন। তাদের দাবী ঘুষের টাকা ফেরৎ দেওয়া হোক। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো অভিযোগের নামমাত্র তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে কানুনগো সিরাজুল ইসলাম ফেঁসে গেলেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে আছে। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় ঘুষখোর সিরাজুল কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না। কিভাবে কানুনগো সিরাজুল তাদের কাছ থেকে জোরপুর্বক ঘুষ আদায় করেন একজন কৃষক তার লিখিত বর্ননাও দিয়েছেন। অনেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুষ গ্রহন সত্য বলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জানা গেছে, জেলা প্রশাসক দপ্তরের ভূমি অধিগ্রহন (এল.এ.ও) শাখার কর্মকর্তা মোছা: নুর নাহার বেগম গত ৯ নভেম্বর এলাকার কয়েকজন কৃষককে ডেকে তাদের অভিযোগ শোনেন। কৃষকদের মধ্যে কুলফাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক অরুন কুমার বিশ্বাস, মতিয়ার রহমান ও খুদিরাম বিশ্বাস তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন। বাকী কয়েকজন কৃষক এলাকার নান্টু দালাল নামে এক ব্যক্তি হুমকীতে কানুনগো সিরাজুলকে ঘুষ দিয়েও বিষয়টি অস্বীকার করেন। অধিগ্রহন কর্মকর্তা মোছা: নুর নাহার বেগম পরবর্তী রোববার (১৩ নভেম্বর) তিন কৃষকের অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু ভুক্তভোগী কৃষকরা ঘটনার দিন বাড়ি পৌছাতে না পৌছাতে ডিসি অফিসের পিয়ন গিয়ে তাদেরকে পরদিন ১০ নভেম্বর আবারো হাজির হতে বলেন। অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে অরুন কুমার বিশ্বাস নামে এক কৃষক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খাদিজা বেগমের কাছে স্বহস্তে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে কানুনগো সিরাজুল ইসলাম তার কাছ থেকে লাখে ১০হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করেন বলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খাদিজা বেগমের কাছে জানান। কৃষক অরুন কুমার খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, গত ৮ মে তারিখে আমি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংক থেকে তুলে ঘুষের টাকা শোধ করি। এই টাকা আমি দালাল নান্টুর কাছ থেকে ধার করেছিলাম। একই গ্রামের ইমান আলীর ছেলে মতিয়ার রহমান শেখ জানান, জেলা প্রশাসকের দপ্তরে তিনিও সাক্ষি দিয়েছেন। তার কাছ থেকেও ঘুষের ৬৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “এই অভিযোগ শতভাগ সত্য আমিও একজন ভুক্তভোগী, যেভাবে ক্যালকুলেটারে টিপে ১০% হিসাব করে টাকা রাখা হয়, তাতে মনে হয় তাদের বাপ দাদার জমানো টাকা। আমি তখন অভিযোগের ঝামেলায় না গিয়ে তাদের টাকা দিয়ে আসি। সর্বমোট ১২% খরচায় আমি টাকা পেয়েছি। আশরাফুল আরো লেখেন “ঢাকা থেকে আসা যাওয়ার ঝামেলায় আমি টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি”। এ ব্যপারে ঝিনাইদহ ভূমি অধিগ্রহন শাখার কানুনগো সিরাজুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ স্বীকার বা অস্বীকার করেন নি। তিনি শুধু এটুকুই বলেছেন, আমি কিছুই জানি না। সব স্যারেরা জানেন। কে এই স্যার? জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খাদিজা বেগমের কাছে ফোন করা হলে তার অফিস থেকে জানানো হয় তিনি ৩ দিনের ট্রেনিংয়ে আছেন।